সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

Q: সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে?
Q: সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও।
Q: Sociology শব্দের অর্থ কি?
Q: কে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন? 
Q: প্রথমে সমাজবিদ্যা কি নামে পরিচিত ছিল?
Q: সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলােচনা করাে।

Ans:

সমাজবিজ্ঞান (Sociology) 

যে শাস্ত্র সমাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনা করে তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজেই মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, শিক্ষাদিক্ষা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়। মানুষের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা সমাজকে কেন্দ্র করেই। সমাজ এবং মানুষ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই সমাজ সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন মানুষের কথা কল্পনা করা যায় না, তেমনি মানুষবিহীন সমাজের কথাও চিন্তা করা যায় না।  এ প্রসঙ্গে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল বলেছেন “মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব, যে মানুষ সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু; না হয় দেবতা”। মানুষের স্বভাব হল সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করা। তাই মানুষকে সমাজবদ্ধ জীব বলা হয়। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সমাজ ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। আর এই সমাজ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে শাস্ত্র সঠিক ধারণা দেয় তাই হল সমাজবিজ্ঞান।

Sociology শব্দের অর্থ? 

ল্যাটিন শব্দ ‘socius’ এবং গ্রিক শব্দ ‘logos’ এই দুটি শব্দের সম্মিলনে ‘sociology’ শব্দটি এসেছে। ‘socious’ শব্দের অর্থ হল সমাজ আর ‘logos’ শব্দের অর্থ হল অধ্যায়ন বা বিজ্ঞান। অর্থাৎ ‘sociology’ শব্দের অর্থ হল সমাজবিজ্ঞান। সুতরাং বলা যায়, সমাজের বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন যে শাস্ত্রের মূল আলােচ্য বিষয়, তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁত (Auguste comte) ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন। Auguste comte এই বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেওয়ার জন্য প্রথমে এর নামকরণ করেন Social physics বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা। পরে তিনি এই বিষয়টিকে সমাজবিদ্যা বা Sociology বলে অভিহিত করেন। এই ভাবে তার হাত ধরেই সমাজবিজ্ঞানের সূচনা হয়। Sociology কে বাংলায় ‘সমাজবিজ্ঞান’, ‘সমাজবিদ্যা’, ‘সমাজতত্ব’ ও বলা হয়।

সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা: 

সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। সেগুলি হল – 

• সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম এর মতে, “Sociology is the science of institutions” অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।

• ফ্রাঙ্কলিন এইচ. গিডিংস তার ‘Principles of Sociology’ গ্রন্থে বলেন “Sociology is the science of mental connection of men”. অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান হল মানুষের মানসিক সম্পর্কে বিজ্ঞান।

• বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী যিমেল বলেন, “Sociology is the science that studies human relationship” অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা মানব সম্পর্ক অধ্যায়ন করে। 

• পার্ক এর মতে, “Sociology is the science of mankind”. সমাজবিজ্ঞান হল মানবগােষ্ঠী সম্পর্কিত বিজ্ঞান। 

• বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ তাদের Society নামক গ্রন্থে বলেছেন, “Sociology alone studies social relationships themselves and society itself”. অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান এমন এক বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে এককভাবে পাঠ করে।

বিজ্ঞানের যে শাখা সমাজের গঠনপ্রণালী এবং পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামাে সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনা করে তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে।

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি: 

1) সমাজের গঠনপ্রকৃতি ও সামাজিক কাঠামাে: একটা সমাজ কিভাবে গড়ে ওঠে এবং তা কিভাবে কাঠামা গত রূপ নেয় সেটাই সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়। সামাজিক কাঠামাের মূল ভিত্তি হল মানব সম্পর্ক। ব্যক্তি, গােষ্ঠী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কই সমাজবিজ্ঞানের মূল আলােচ্য বিষয়। 

2) বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ: সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল সামাজিক কাঠামাে, সামাজিক আচার আচরন ও সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আলাচনা ও বিশ্লেষণ করা।

3) নির্দেশনা প্রদান: পরিবর্তনশীল সমাজ সম্পর্কে সঠিক নির্দেশ দান করা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।

4) সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে অধ্যয়ন করে: একটা সমাজ ব্যবস্থাকে জানতে গেলে সমাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে হবে। কিভাবে সমাজে নানা ধরনের সংঘের (Association) বিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে পরিবর্তন এসেছে তাও সমাজবিজ্ঞানে আলাচিত হয় অর্থাৎ, সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এসবের ব্যাখ্যা করাই সমাজবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতি সমাজের এক একটা দিক সম্পর্কে ধারণা দেয়। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ বিশ্লেষণ করে। 

5) সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ: সমাজবিজ্ঞান সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশল অবলম্বন করে। সমাজের ব্যাখ্যা ও গবেষণায় কোন কল্পনা বা আবেগের স্থান নেই। সমাজের বাস্তবতা নির্ণয় করাই এর অন্যতম লক্ষ্য। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক নেইল. জে. স্মেলসার এর মতে, “Sociology is the experience or study base science which is study on society and social relationship”. সমাজবিজ্ঞান হল এমন একটি অভিজ্ঞতা বা গবেষণা নির্ভর বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে অধ্যয়ন করে।

6) সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান: সমাজবিজ্ঞান শুধুমাত্র সমাজের ঘটনাবলির বর্ণনা করে তা নয়, এটি ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য যুক্তি ভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকে। 

7) নিরপেক্ষতা অবলম্বন: তাত্বিক এবং আদর্শগতভাবে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষ বিজ্ঞান। সমাজ বাস্তবে ভালাে না মন্দ কেমন হওয়া উচিত বা কোনটা সমাজের জন্য অনুচিত, এসব বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে অর্থাৎ, উন্নয়নশীল সমাজে সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হল সমাজের সমস্যা গুলাে চিহ্নিত করা এবং তার সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া।

সমাজবিজ্ঞান হল এমন এক বিজ্ঞান যে বিজ্ঞান মানুষের সামাজিক জীবন, নানাবিধ সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক গােষ্ঠী নিয়ে আলােচনা করে।

আরো পড়ুন

ভারতের অধস্তন আদালতের কার্যাবলী | Functions of Subordinate Courts in India

মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য কি | সমাজবিজ্ঞান কে বিজ্ঞান বলা হয় কেন

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে | শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি

গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে | গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য | অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার | Rural Society in Bengali

সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা | Educational Psychology in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!