শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে | শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি

প্রশ্নসমূহঃ
1. সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে?
2. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
3. Sociology শব্দের অর্থ কি?
4. কে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন?
5. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে ? 
6. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা।
7. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলােচনা করাে। 
8. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি আলােচনা করাে।

উত্তর:

সমাজবিজ্ঞান কি? 

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজেই মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, শিক্ষাদিক্ষা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়। মানুষের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা সমাজকে কেন্দ্র করেই। সমাজ এবং মানুষ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন মানুষের কথা কল্পনা করা যায় না, তেমনি মানুষবিহীন সমাজের কথাও চিন্তা করা যায় না। সমাজের বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন যে শাস্ত্রের মূল আলােচ্য বিষয়, তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে।

sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘socius’ এবং গ্রিক শব্দ ‘logos’ থেকে এসেছে। ‘socious’ শব্দের অর্থ হল সমাজ আর ‘logos’ শব্দের অর্থ হল অধ্যায়ন বা বিজ্ঞান। অর্থাৎ ‘sociology’ শব্দের অর্থ হল সমাজবিজ্ঞান

ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁত (Auguste comte) ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন। 

শিক্ষা কি?

শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যাক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন ঘটে এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে ?

শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের পারস্পরিক মিলিত রূপই হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। শিক্ষাবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। সমাজবিজ্ঞান আমাদের সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দেয় আর শিক্ষা বিজ্ঞান দেয় বিভিন্ন নীতি ও কৌশল। এই দুইয়ের মিলিত রূপই হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলােচনা করে শিক্ষা মূলক সমাজবিজ্ঞান। তাই সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান বা Educational Sociology। E.George Payne -কে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি তার ‘Principles of Educational Sociology’ নামক গ্রন্থে, বর্ণনা করেন গােষ্ঠী জীবনের উপর শিক্ষার প্রভাব এবং শিক্ষার উপর দলগত জীবনের প্রভাব। তিনি সেই সমস্ত সামাজিক বিষয়গুলি অধ্যয়নের উপর জোর দেন যা মানুষের বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রভাব ফেলে।

শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে শিক্ষার উদ্দেশ্য, পাঠক্রম ও শিক্ষার পদ্ধতি।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা:

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। সেগুলি হল – 

• George Payne বলেছেন, “Educational Sociology is the science which describes and explain institutions, groups and social processes in relation to the educational system in its evolution and changing function”। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান হল “সেই বিজ্ঞান যা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান, গােষ্ঠী এবং সামাজিক প্রক্রিয়াগুলিকে তার বিবর্তন এবং পরিবর্তনের ভিত্তিতে বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা করে”। 

• Cook and Cook এর মতে, পার্থিব বিষয়বস্তু এবং মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য যে সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও কৌশলের প্রয়ােজন তাই হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। 

• F. J. Brown এর মতে , শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করে। 

• Ottaway এর মতে , শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল এমন একটি বিষয় যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন বিষয় ও শিক্ষার অধ্যায়ন করা হয়।

Robinson Smith বলেছেন, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির  প্রয়োগ।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি :

1) সামাজিক উন্নয়ন: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার অন্যতম প্রকৃতি হল শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন ও শিক্ষার অগ্রগতি ঘটানাে। 

2) প্রয়ােগমূলক শাখা: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ঘটে। 

3) ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন: শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

4) শিক্ষা ও সমাজের সম্পর্ক: শিক্ষার সাথে সমাজের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা তা নিয়ে আলােচনা করে থাকে। 

5) সামাজিক প্রক্রিয়ার প্রয়ােগ: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযথভাবে সামাজিক প্রক্রিয়া গুলির প্রয়ােগ করা হয়ে থাকে।

6) বৈজ্ঞানিক নীতির প্রয়োগ: শিক্ষা ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও নীতির প্রয়োগ ঘটে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সুসংগতিপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটে।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি

শিক্ষাবিজ্ঞানের যেমন কতগুলি নির্দিষ্ট পরিধি আছে, তেমনি সমাজতত্বেরও নির্দিষ্ট কতকগুলি পরিধি রয়েছে। এই দুয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্বের পরিধি। সেগুলি হল- 

1. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্বের পরিধির অন্যতম উপকরণ হল জনসমষ্টি। জনসমষ্টি হল দেশের অন্যতম প্রধান সম্পদ। যার দ্বারা একদিকে যেমন সুষ্ঠ সমাজ তৈরি হয়, অন্যদিকে তেমন তৈরি হয় যথার্থ শিক্ষাব্যবস্থা। তাই শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ব জনসমষ্টির বিভিন্ন সমস্যা, প্রকৃতিগত উন্নয়ন এবং প্রগতিগত উন্নয়ন অভিমুখী শিক্ষাভাবনা নিয়ে আলােচনা করে। 

2. ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবন বিকাশের প্রত্যেকটি স্তরে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান প্রভাব বিস্তার করে। 

3. সকল ব্যবস্থাপনার মূলে রয়েছে মানব সম্পদ। এই মানব সম্পদের প্রকৃতিগত দিক বিশ্লেষণ করে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে।

4. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ তত্বের পরিধির আরেকটি অন্যতম বিষয় হল সামাজিক মিথস্ক্রিয়া। যার দ্বারা মানুষ দল গঠন করে এবং পারস্পরিক সংগতি বিধান করে। তাই মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতি, প্রক্রিয়া, প্রকার সম্পর্কে আলােচনা করে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। 

5. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান সমাজ জীবনের গণতান্ত্রিক ভাবনার বিন্যাস এবং প্রবাহকে পরিচালিত করার মূলনীতি আলােচনা করে। 

6. শিক্ষাবিজ্ঞানের সাপেক্ষে সামাজিক গােষ্ঠী জীবন ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি এবং তাৎপর্য আলোচনা করে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান।

আরো পড়ুন

সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে | গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য | অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার | Rural Society in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!