শিক্ষাকে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার বলা হয় কেন

শিক্ষাকে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার বলা হয় কেন ?

উত্তর:

শিক্ষাকে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার বলা হয় কারণ :

• সমাজ বিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমাজ বিজ্ঞান এবং শিক্ষা এ অপরের পরিপূরক। শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে অভিযোজন করতে সহায়তা করে।

সামাজিক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, নিয়ন্ত্রণ, গতিশীলতা এই সমস্ত কিছু জন্য শিক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

• শিক্ষার সাহায্যে আমরা একটি সমাজের পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে

পারি এবং তাকে সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। তাই শিক্ষা কে সামাজিক পরিবর্তনে অন্যতম হাতিয়ার বলা হয়।

জন ডিউই বলেছেন, ‘শিক্ষা হল সামাজিক উন্নতি ও সামাজিক সংস্কারের প্রধান উপায়। শিক্ষার কাজ হল সামাজিক কৃষ্টির সংরক্ষণ, উন্নতিকরণ ও বংশ পরস্পরায় সঞ্চালন।

• ব্রাউন এর মতে, শিক্ষা একটি সজ্ঞান প্রক্রিয়া, যার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে, তার গোষ্ঠীর মধ্যে পরিবর্তন আসে। শিক্ষা সমাজ নিয়ন্ত্রণের উপায়। শিক্ষাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি যোগায়। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন, শিক্ষা হল সামাজিক পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার বা যন্ত্র। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য যে শিক্ষামূলক কর্মসূচি গুলি গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলি হল –

1) নিরক্ষরতা দূরীকরণ : একটি সমাজের উন্নতি তখনই সম্ভব যখন সমাজের সমস্ত মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা যায়। নিরক্ষরতা সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে আর্থিক উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে। শিক্ষাই পারে সমাজের প্রতিটা মানুষকে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে। 

2) সার্বজনীন ও অবৈতনিক শিক্ষার প্রবর্তন : সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষাকে সার্বজনীন ও অবৈতনিক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের প্রতিটি শিশু যাতে শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

3) নেতৃত্ব: শিক্ষার সমাজের মধ্যে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি রচনা করে।

4) জ্ঞানের বিকাশ: শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। জ্ঞান মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। জ্ঞান মানুষকে নতুন নতুন সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করে তোলে। নিরক্ষরতা দূর করে মানুষের মনে জ্ঞানের আলোর প্রসার ঘটায়। শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যাক্তি জ্ঞান অর্জন করে এবং সেই জ্ঞান ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে সহায়তা করে।

5) নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ : শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের সহায়তা করে। শিক্ষার্থীকে সৎ ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। জীবনে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। শিক্ষার প্রভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের ও পরিবর্তন হয়। সমাজে অনেক কুসংস্কার রয়েছে সেগুলি দূর হয় নতুন মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে।

6) বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা: প্রত্যেকটি ব্যক্তির মধ্যে কিছু প্রাথমিক চাহিদা থাকে। সেগুলো হল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। এই তিন ধরনের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য প্রয়োজন বিত্তি বা কাজের। তাই বর্তমানে বৃত্তি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের উপযোগী কাজ করতে পারে এবং জীবনের প্রাথমিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারে। বৃত্তি শিক্ষার মধ্যে দিয়েই সমাজের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব। 

7) কুসংস্কার দূরীকরণ: অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সামাজিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। শিক্ষাই পারে সামাজিক এই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার গুলি দূর করতে। তাই সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুন

বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Vedic Education System

বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো | Buddhist Education System in Bengali

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর | Brahmanical System of Education in Bengali

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission) | স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ

শিক্ষার পরিধি গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment

error: Content is protected !!