Q: ভারতের অধস্তন আদালতের কার্যাবলী | Functions of Subordinate Courts in India
Q: অধস্তন আদালতগুলির গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
Q: পশ্চিমবঙ্গের অধস্তন বিচার ব্যবস্থার পরিচয় দাও।
উত্তর:
ভারতের অধস্তন আদালতের কার্যাবলী
পশ্চিমবঙ্গের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে আছে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ। তার অধীন বিভিন্ন স্তরে অনেকগুলি নিম্ন আদালত আছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতে অখণ্ড বিচারব্যবস্থার শীর্ষে সুপ্রিমকোর্ট। তার অধীনে থেকে সব আদালতকে কাজ করতে হয়। সংবিধানের ১৪১ নং ধারায় বলা হয়েছে,— ভারতীয় ভূখণ্ডে যত আদালত আছে, সবাই সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ করবে। তাই হাইকোর্ট ও তার অধীনস্থ সব আদালতকে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থেকে কাজ করতে হয়। রাজ্যস্তরে অধস্তন বিচারব্যবস্থার কাঠামো নিম্নে আলোচিত হল-
(ক) দেওয়ানি আদালত:
পশ্চিমবঙ্গে নিম্নলিখিত অধস্তন দেওয়ানি আদালত আছে :
(১) ন্যায় পঞ্চায়েত: এটি হল সর্বনিম্ন দেওয়ানি আদালত। ১৯৭৩ সালে পঞ্চায়েত আইনে বলা হয়েছে—রাজ্য সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে গ্রাম পঞ্চায়েত তার এলাকায় ন্যায় পঞ্চায়েত তৈরি করতে পারবে। পাঁচ জন সদস্য নিয়ে এটি গঠিত হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত এদের নির্বাচিত করবে। ন্যায় পঞ্চায়েত ছোটোখাটো দেওয়ানি মামলার বিচার করতে পারবে।
(২) ক্ষুদ্র আদালত: বড়ো বড়ো শহরে ছোটোখাটো দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্যে ক্ষুদ্র আদালত গঠিত হয়। কলিকাতা শহরে এই ধরনের আদালত আছে।
(৩) মুন্সেফী আদালত: ন্যায় পঞ্চায়েতের উপরে আছে মুন্সেফী আদালত। মহকুমা ও জেলা শহরে এগুলি আছে। ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকার সম্পত্তির মামলার বিচার এখানে হয়। তা ছাড়া, ন্যায় পঞ্চায়েতের রায়ের বিরুদ্ধে এখানে আপীল করা যায়।
(৪) সাব-জজের আদালত: মুন্সেফী আদালতের উপরে আছে সাব-জজের আদালত। এখানে সব রকমের দেওয়ানি মামলার বিচার হয়। তা ছাড়া, মুন্সেফী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এখানে আপীল করা যায়।
(৫) জেলা জজের আদালত: সাব-জজের আদালতের উপরে আছে জেলা জজের আদালত। এটি হল জেলার সর্বোচ্চ আদালত। এর মূল ও আপীল এলাকা আছে। সাব-জজের রায়ের বিরুদ্ধে এখানে আপীল করা যায়। এ ছাড়া, কলিকাতার মতো বড়ো শহরে নগর দেওয়ানি আদালত আছে।
(খ) ফৌজদারি আদালত:
পশ্চিমবঙ্গে নিম্নলিখিত অধস্তন ফৌজদারি আদালত আছে :
(১) ন্যায় পঞ্চায়েত: ১৯৭৩ সালের আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে ন্যায় পঞ্চায়েত থাকবে। এই পঞ্চায়েত ছোটোখাটো মারামারির বিচার করতে পারবে।
(২) ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত: প্রত্যেক জেলায় একজন প্রধান বিচার বিভাগীয় জেলা ম্যাজিষ্টেট থাকেন। তাঁর অধীনে আরও কয়েকজন ম্যাজিষ্ট্রেট থাকেন। গুরুতর ফৌজদারি মামলার বিচার তাঁরা করেন। ক্ষমতার গুরুত্ব অনুসারে তাদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
(৩) দায়রা জজের আদালত: জেলার সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ হলেন দায়রা জজ (Session Judge)। জেলা জজই হলেন দায়রা জজ। তাঁর অধীনে কয়েকজন সহকারী দায়রা জজ থাকেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী জজের রায়ের বিরুদ্ধে দায়রা জজের কাছে আপীল করা যায়।
(গ) লোক আদালত:
ভারতীয় বিচারব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল, – লোক আদালত গঠন। সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি পি. এন. ভগবতীর প্রস্তাব অনুসারে এই আদালতের জন্ম হয়। প্রথমে দিল্লিতে ১৯৮৫ সালে এই আদালতের অধিবেশন বসে। পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণ আদালতে বিচারব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করা ব্যয়সাপেক্ষ। গরিব মানুষরা এই সুযোগ নিতে পারে না। তাই তারা যাতে সহজে স্বল্প খরচে এই সুযোগ নিতে পারে, তার জন্যে লোক আদালতের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও লোক আদালত গঠিত হয়েছে। এই আদালত দাম্পত্য জীবনের বিরোধ, পথ দুর্ঘটনা প্রভৃতি বিরোধের মীমাংসা সহজ উপায়ে এবং অল্প সময়ে করে দেয়। অবসরপ্রাপ্ত দুজন বিচারপতিকে নিয়ে এই আদালত গঠিত হয়। সহজ সরল পদ্ধতিতে সর্বসমক্ষে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত বিচারকার্য সম্পাদিত হয় বলে এই আদালত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন
লোকসভার স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী | Powers of Speaker of Lok Sabha
ডেভিড হেল্ড এর গণতন্ত্র মডেলটি আলোচনা করো | David Held’s Model of Democracy
ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার | Fundamental Rights of Indian Constitution
সমাজ কাকে বলে | What is Society in Bengali
সামাজিক পরিবর্তন কি | সামাজিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য | Meaning and Characteristics of Social Change
সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি