কোঠারি কমিশন (1964-66) | Indian Education Commission in Bengali

Q: কোঠারি কমিশন (1964-66) | Indian Education Commission in Bengali
Q: কোঠারি কমিশন গড়ে ওঠার কারণ কি ? প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ

উত্তর:

কোঠারি কমিশন (Indian Education Commission)

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি গুলিকে দূর করা এবং তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তাই 1948 সালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন এবং 1952 সালে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গড়ে ওঠে। এই দুটি কমিশনের সুপারিশ সরকার তখন সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেননি, যার ফলে শিক্ষার অনেক ত্রুটি থেকে যায়। শিক্ষার এই ত্রুটি গুলিকে দূর করার জন্য এবং শিক্ষার সমগ্র ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা ও তার প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য 1964 সালের 14 জুলাই তৎকালীন ভারত সরকার Dr. Daulat Singh Kothari র নেতৃত্বে 17 জন সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ডি. এস .কোঠারি তার নাম অনুসারে একে ‘কোঠারি কমিশন” বলা হয়।

কমিশন 1964 সালের 2 রা অক্টোবর থেকে আলোচনা শুরু করেন এবং 1966 সালের 29 জুন ভারত সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেন. দীর্ঘ প্রায় 21 মাস আলোচনার পরে “Education And National Development” নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। কমিশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা সর্বস্তরের উন্নয়নের নীতি সমূহ সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দান করা।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা

কোঠারি কমিশন তার রিপোর্টের শুরুতেই বলেছেন, ভারতের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার শ্রেণীকক্ষে (The destiny of India is being shaped in her classroom)। কমিশন মনে করেন শিক্ষার সাহায্যে বিভিন্ন জাতীয় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, দেশের উন্নয়ন কে সক্রিয় করে তোলা সম্ভব। কোঠারি কমিশন শিক্ষার সর্বস্তরের অর্থাৎ প্রাকপ্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষাস্তর পর্যন্ত সুপারিশ করেছেন। শিক্ষার বিভিন্ন দিকের ওপর বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রচলিত বিদ্যালয় ভিত্তিক শিক্ষাই হলো সাধারণ শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার কতগুলো স্তর রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার পূর্বে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বলে। সাধারণত পাঁচ বা ছয় বছর বয়সের আগেই শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হবে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য :

• শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা – যেমন পোশাক পরা, টয়লেট অভ্যাস করা, খাদ্য গ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি।

• সামাজিক অভ্যাস ও আদব-কায়দা গড়ে তোলা, দলগতভাবে কাজের প্রতি উৎসাহ দান, অন্যের প্রতি অনুভূতিশীল করে তোলা।

• শিশুকে তার আবেগ অনুভূতি, রাগ প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করা।

• শিক্ষার্থী যে পরিবেশে বসবাস করছে সেই পরিবেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহী করে তােলা। 

• শিশুদের নতুন কিছু উদ্ভাবন, স্বাধীন চেতনা এবং সৃজনশীলতা কে উৎসাহ দান করা।

• শিশুর চিন্তা অনুভূতিকে স্পষ্ট, সঠিক এবং সাবলীলভাবে ব্যক্ত করার ক্ষমতাকে বিকাশ করা।

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামাে :

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার স্তর সম্পর্কে কমিশন বলেছেন, এই স্তরের শিক্ষা কাল হবে 1 থেকে 3 বছরের। শিশুরা তিন থেকে চার বছর বয়সে পৌঁছালে শিক্ষা গ্রহণ শুরু হবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত তা চলবে, প্রাক 

প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম :

• খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষাদান করতে হবে, এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইনডাের এবং আউটডাের খেলা, যেখানে শিশুরা সক্রিয়ভাবে খেলাধূলা অংশগ্রহণ করতে পারবে, শারীরশিক্ষা – যার মধ্যে রয়েছে সাধারণ ব্যায়াম, নাচ ইত্যাদি।

• প্রাকৃতিক বস্তু ও বিশেষভাবে তৈরি জিনিসপত্র দিয়ে শিক্ষাদান

• বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ ; আঙ্গুলের দক্ষতা বাড়ানাে এমন ধরনের কাজ 

• এছাড়াও ছবি আঁকা ,বাদ্যযন্ত্র বাজানাে প্রভৃতি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে 

• শিক্ষামূলক কাজের মধ্যে থাকবে – ভাষা, স্বাস্থ্য সম্মত নিয়ম, প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা, বিভিন্ন জীবজন্তু সম্বন্ধে ধারণা।

• গননা শেখার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

• নিজের কাজ নিজে করার ইচ্ছা তৈরি করা। 

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : 

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে –

• ক্রেস।

• নার্সারি বিদ্যালয় 

• কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় 

• মন্তেশ্বরী বিদ্যালয় 

• প্রাক বুনিয়াদী বিদ্যালয়

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ :

• তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের 5% এবং 5 থেকে 6 বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের 15% যাতে 1986 সালের মধ্যে এই শিক্ষার আওতায় আসে তার চেষ্টা করতে হবে। 

• প্রত্যেকটি জেলায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা, পরিদর্শন ও প্রসারের জন্য একটি করে কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। 

• শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পুস্তক রচনার ব্যবস্থা করতে হবে। 

• প্রতিটি রাজ্যের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। 

• বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই শিক্ষা প্রসারের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের উৎসাহ দান করতে হবে, প্রয়োজনে এদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে। 

• পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশন, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পর্ষদের সুপারিশ গুলিই গ্রহণ করেছেন। 

• এই শিক্ষায় কোনাে কঠোর নিয়ম-নীতি থাকবে না। 

• জাতীয় রাজ্যস্তরে শিশুর পরিচর্যা ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে যে সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে তাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।

আরো পড়ুন

অশোক মিত্র কমিশন | Ashok Mitra Commission 1991-1992

ডেলরস কমিশন কী | Delors Commission (1996)

ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার | Fundamental Rights of Indian Constitution

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | Kothari Commission (1964-66) in Bengali

জাতীয় উন্নয়নে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | National Policy on Education (NPE) in Bengali

জনার্দন রেড্ডি কমিটি | Janardhana Reddy Committee or POA 1992 in Bengali

জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020 PDF | National Education Policy 2020 in Bengali

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা প্রথাগত শিক্ষা কি | বৈশিষ্ট্য | Formal Education In Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!