নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা প্রথাগত শিক্ষা কি | বৈশিষ্ট্য | Formal Education In Bengali

Q: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা প্রথাগত শিক্ষা কি | বৈশিষ্ট্য | Formal Education In Bengali

Ans:

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা প্রথাগত শিক্ষা

যে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার চারটি উপাদান- শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পাঠক্রম এবং বিদ্যালয় সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত ভাবে পরিচালনার দ্বারা শিক্ষা কার্য সম্পন্ন হয় তাকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা :

• বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পি.ডি. শুক্লা বলেছেন, প্রথাসিদ্ধ শিক্ষা হল সেই প্রথাগত পদ্ধতি যার মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একটি শ্রেণিকক্ষে মুখােমুখি অবস্থান করে এবং নিয়মিত পঠন পাঠন অভ্যাস করে। বিশিষ্ট ভারতীয় শিক্ষাবিদ জে.পি নায়েক বলেছেন ,সামাজিক সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাই হল নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : 

1) নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পিত – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা পরিকল্পিত হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামাজিক প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করা হয়ে থাকে। 

2) নির্দিষ্ট বয়সের শিক্ষার্থী – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বয়স আগে থেকে নির্দিষ্ট করা থাকে। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে প্রবেশের জন্য শিক্ষার্থীদের নূন্যতম বয়স প্রয়োজন তা পূর্বনির্দিষ্ট। যেমন – 3+ বছর বয়স হলে একটি শিশুকে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, 5+ বছর বয়স হলে প্রাথমিক স্তরে এবং 9+ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে। এই বয়সের কম হলে যেমন শিক্ষার্থীরা  নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় অংশগ্রহণ করতে পারবে না তেমনি খুব বেশি বয়স হলে নির্দিষ্ট স্তরে ভর্তি নেওয়া হয় না।

3) নির্দিষ্ট পাঠক্রম – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি সুনির্দিষ্ট পাঠক্রম থাকে। যা প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা আলাদা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠদান সম্পন্ন করতে হয় ।

4) সুনির্দিষ্ট শিক্ষালয় – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পূর্বনির্ধারিত শিক্ষালয় থাকে এই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে নির্দিষ্ট সময় তালিকা অনুসরণ করে পাঠদান করা হয়। 

5) কঠোর শৃঙ্খলা – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়কে একটা শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়।

6) যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক – এই শিক্ষায় বিভিন্ন স্তরের জন্য শিক্ষকদের শিক্ষাগত যােগ্যতা কি হবে তা সমাজ বা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে দেয়। যেমন – মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করার জন্য স্নাতক ডিগ্রি এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করার জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রী ছাড়া শিক্ষকতা করা যায় না। 

7) নির্দিষ্ট সময়সীমা – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় প্রতিটি স্তরের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করা থাকে। যেমন – নিম্ন প্রাথমিক স্তরের জন্য চার বছর, উচ্চ প্রাথমিক স্তরের জন্য চার বছর, মাধ্যমিক স্তরের জন্য দু বছর এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের জন্য দু বছর।

8) নির্দিষ্ট প্রবেশপথ – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রবেশের পথ মাত্র একটাই। কোন শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে নির্দিষ্ট বয়সে, নির্দিষ্ট স্তরে প্রবেশ করতে হবে এবং জ্ঞান অর্জন করে সেই স্তরে উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী স্তরে যেতে হবে যেমন – কোনাে শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কে বাদ দিয়ে মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছাতে পারে না।

9) শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী পরস্পর মুখােমুখি আলােচনায় অংশ নেন। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন এবং শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষককে প্রয়োজন মত প্রশ্ন করতে পারে।

10) নিয়মিত উপস্থিতি – এই শিক্ষায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হয়। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীকে শিক্ষালয়ে উপস্থিত হতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে হয়। 

ii) নিয়মিত পরীক্ষা – শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে কতটা জ্ঞান লাভ করেছে বা দক্ষতা অর্জন করেছে তা জানার জন্য নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্রটি বা সীমাবদ্ধতা : 

i) বৈচিত্র্যহীন পাঠক্রম – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পাঠক্রম বৈচিত্রহীন এখানে একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ভাবে একই পাঠক্রম অনুসরণ করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা, আগ্রহ, সামর্থের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। 

2) যান্ত্রিক ও কৃত্রিম পদ্ধতি – এটি একটি যান্ত্রিক ও কৃত্রিম শিক্ষা পদ্ধতি। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হয় এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।

3) সুযােগ সুবিধার অভাব – স্বাধীনতার পর থেকে মানুষের মধ্যে শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই অনুপাতে শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে উঠতে পারেনি। ফলে বিপুল সংখ্যক শিশু নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

4) শিক্ষক নির্ভর – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে উপযুক্ত শিক্ষকের উপর। কিন্তু দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যােগ্য শিক্ষকের অভাব দেখা যায়।

5) নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক – এই শিক্ষায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয় কে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারে না ফলে তাদের শিক্ষা ব্যাহত হয়।

6) অপরিবর্তনশীল – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পাঠক্রম আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে। এখানে প্রয়োজনমতো পাঠক্রম কে পরিবর্তন করা যায় না। ফলে এই শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা সর্বাধুনিক তথ্যলাভ করতে পারে না। 

7) পরীক্ষা কেন্দ্রিক – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মূলত পরীক্ষা কেন্দ্রিক। পরীক্ষায় সফল হওয়ার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীর সাফল্য। ফলে শিক্ষার্থীর নৈতিক মূল্যবােধের বিকাশ যথাযথভাবে ঘটে না।

8) সীমিত প্রবেশপথ – নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশের একটি মাত্র পথ। শিক্ষার্থী যদি সময় মত নির্দিষ্ট স্তরে ভর্তি না হয় তাহলে সেই শিক্ষাবর্ষে আর শিক্ষার সুযােগ পায়না।

আরো পড়ুন

জনার্দন রেড্ডি কমিটি | Janardhana Reddy Committee or POA 1992 in Bengali

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষা | Concept of education in Bengali

প্রথামুক্ত বা নিয়ম-বহির্ভূত শিক্ষা কি | Non-formal Education In Bengali

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | Growth and Development of a Child in Bengali

মনোবিজ্ঞান কি | শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক কি | Psychology in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!