জনার্দন রেড্ডি কমিটি | Janardhana Reddy Committee or POA 1992 in Bengali

জনার্দন রেড্ডি কমিটি | Janardhana Reddy Committee or POA 1992 in Bengali

উত্তর:

জনার্দন রেড্ডি কমিটি :

1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির মূল্যায়নের জন্য দুটি কমিটি গঠিত হয় – 1) রামমূর্তি কমিটি (1990) এবং 2) জনার্দন রেড্ডি কমিটি (1992)। জনার্দন রেড্ডি কমিটি 1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির বিষয়ে বিবেচনা করে, তার পুনর্বিন্যাসের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গুলি করেন সেগুলি হল – 

1) শিক্ষার কাঠামাে সংক্রান্ত সুপারিশ : 

সারাদেশে শিক্ষার কাঠামাে হবে (10+2+3) 10 বছরের মধ্যে পাঁচ বছরে শিক্ষা হবে নিম্ন প্রাথমিক, তিন বছরে শিক্ষা হবে উচ্চ প্রাথমিক এবং দু বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা। উচ্চমাধ্যমিক স্তর হবে দু বছরের এবং উচ্চ শিক্ষা স্তর হবে তিন বছরের। 

2) প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ :

a) প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে।

b) 14 বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর জন্য সার্বজনীন, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

c) বিদ্যালয় ছুট বা (Dropout) সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর মধ্যে বিদ্যালয় ছুটের সংখ্যা 20% কমিয়ে আনতে হবে।

d) শিক্ষার্থীরা যাতে মাঝপথে শিক্ষা বন্ধ না করে, সে ব্যাপারে তাদের পিতা-মাতাদের সচেতন করে তােলা। 

e) প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে রূপায়িত করতে হবে।

f) প্রাথমিক শিক্ষার পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

g) প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে নূন্যতম শিক্ষার মান কতটা হওয়া প্রযােজন তা নির্দিষ্ট করতে হবে। 

h) প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে একই পাঠক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে 

i) এই পাঠক্রম প্রণয়নের দায়িত্বে থাকবে NCERT j) প্রতি 2টি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি করে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 

3) মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ :

a) মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রয়োজন। 

b) উপযুক্ত পরিকাঠামাে-সহ নবােদয় বিদ্যালয় তৈরি করা না গেলে, নিম্নমানের নবােদয় বিদ্যালয় এর পরিবর্তে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলিকে নবােদয় বিদ্যালয়ে পরিনত করার ওপর জোর দিতে হবে।

c) অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

d) প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রয়ােজনীয় শিক্ষক ও শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

e) মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

f) অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

g) পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন কে আরাে বেশি বাস্তবসম্মত ও নৈব্যক্তিক করা প্রযােজন। 

h) কোঠারি কমিশনে উল্লেখ করা হয়েছিল “কমন স্কুল” ব্যবস্থার কথা, একে গুরুত্ব সহকারে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

i) যেসব অঞ্চলে তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় বেশি রয়েছে সেসব অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 

j) বিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিদর্শন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে। 

k) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একজন সুনাগরিক হওয়ার জন্য সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হওয়া উচিত সে সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে।

l) মেয়েদের শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

m) মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের পুনর্গঠন ও স্বশাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

n) মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন।

4) উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ : 

a) জাতীয় পাঠক্রম রচনার এবং এর ভিত্তিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করা। 

b) উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাকে ‘কমন স্কুল’ ব্যবস্থায় নিয়ে আসা।

c) উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর আগ্রহ সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম নির্বাচনের সুযােগ থাকবে।

d) পাঠক্রমকে বহুমুখীকরণ করা। 

5) উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ : 

a) বর্তমানে যে সমস্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলির পরিকাঠামাের মান উন্নয়ন করতে হবে।

b) স্বয়ংশাসিত কলেজ স্থাপন করতে হবে। 

c) উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে ব্যাক্তিদের মধ্যে সামাজিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও আধ্যাত্বিক ক্ষমতা যাতে বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

d) শিক্ষার্থীদের দক্ষতার যাতে বিকাশ ঘটে এবং তারা যাতে জাতীয় উন্নতির সহায়ক হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

e) শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

f) কলেজে কি পরিমান ছাত্র ভর্তি করা হবে তা তার পরিকাঠামাে অনুযায়ী ঠিক করতে হবে।

g) পাঠক্রমের পুনর্বিন্যাস এবং উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়নের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

h) উন্নত মানের গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। 

i) মুক্ত শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করতে হবে।

j) বর্তমান উপযােগী বিষয়কে পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

6) বৃত্তি শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ : 

a) 1995 সালের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে 10% শিক্ষার্থীকে এবং 2000 সালের মধ্যে 25% শিক্ষার্থীকে বৃত্তিশিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

b) বৃত্তিমুখী শিক্ষাকে পরিকল্পিতভাবে চালু করতে হবে।

c) সাধারণ শিক্ষার বিদ্যালয়গুলিতে বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় এ জন্য উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণে চিন্তা করতে হবে।

d) বৃত্তি শিক্ষার জন্য অধিক সংখ্যক বৃত্তি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। 

e) বৃত্তি শিক্ষার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী যাতে চাকরি পায় বা স্বনির্ভর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

7) শিক্ষক শিক্ষণ সংক্রান্ত সুপারিশ : 

a) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের প্রয়োজন।

b) পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক শিক্ষণ কর্মসূচির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

c) অধিক সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

d) শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

e) জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

8) প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ :

a) বিদ্যালছুট কর্মরত শিশু এবং যেসব কর্মরত মহিলারা প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না তাদের জন্য প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

b) প্ৰখা বহির্ভূত শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উন্নত মানের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ প্রস্তুত করা এবং সেগুলিকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে। 

c) প্রথামুক্ত শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

d) আগ্রহী ও উপযুক্ত ব্যাক্তিদের বহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষক হিসাবে নির্বাচন করতে হবে।

e) প্রথামুক্ত শিক্ষার জন্য পঞ্চাযেত ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কে গুরুত্ব দিতে হবে।

f) এই শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে হবে ।

উল্লেখিত সুপারিশ গুলি ছাড়াও 1992 সালের ‘প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশান’ আরাে কতগুলি সুপারিশের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল – 

a) সারাদেশে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার সুযােগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

b) শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন বাের্ডের ভূমিকার পরিবর্তনের প্রয়োজন। 

c) সমস্ত স্তরে শিক্ষার পাঠক্রম এর আধুনিকীকরণের প্রয়োজন।

d) পাঠক্রম সংক্রান্ত গবেষণা ও বিকাশের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি উন্নতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। 

e) সমস্ত স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটানাে প্রয়োজন। 

f) প্রতিটি রাজ্য সরকার যাতে ‘ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস’ গঠন করে তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

g) শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে।

সবশেষে বলা যেতে পারে, 1992 এর সুপারিশ সমূহ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা হলেও সম্পূর্ণ কার্যকারী করা যায়নি ,অর্থ ও সমন্বয়ের অভাবে। এর ফলে শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরো পড়ুন

জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020 PDF | National Education Policy 2020 in Bengali

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা প্রথাগত শিক্ষা কি | বৈশিষ্ট্য | Formal Education In Bengali

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষা | Concept of education in Bengali

প্রথামুক্ত বা নিয়ম-বহির্ভূত শিক্ষা কি | Non-formal Education In Bengali

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | Growth and Development of a Child in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!