বাংলা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

Q: বাংলা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
Q: বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান লেখ

উত্তর:

বাংলা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস হলো হাতে করে বয়ে নিয়ে যাওয়া সময়ের আয়না— যেখানে সামগ্রিক জীবন বোধের প্রতিফলন ঘটেছে। উপন্যাসে উপস্থিত হয় সামগ্রিক জীবনের রূপ। সেই জীবনরূপেরই সার্থক প্ৰতিফলন ঘটেছে রবীন্দ্র উপন্যাসে। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কার আন্দোলন স্বদেশী আন্দোলন সেই সঙ্গে দেখতে পাই সাধারণ মানুষের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব ও রোমান্টিকতা। উপন্যাস সৃষ্টিতে তিনি বঙ্কিমকে অতিক্রম করতে পারেনি কিন্তু উপন্যাসের ডাইমেনশন কে যে সুদূর প্রসারিত করে তাতে বিস্ময়কর নবীনত্বের সঞ্চার করেছেন তা অস্বীকার করা যাবে না।

ইতিহাস, সমাজ রাজনীতি, রোমান্টিকতা, জীবন সমস্যামূলকতা প্রত্যেকটি বিষয়েই তিনি উপন্যাস রচনা করেছেন। বিষয়ের বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিন্যস্ত করা হলো—

১. ইতিহাস ও রোমান্সনির্ভর উপন্যাস: বউঠাকুরাণীর হাট’ (১৮৮৩), ‘রাজর্ষি’ (১৮৮৭) )

২. জীবনসমস্যামূলক উপন্যাস: ‘চোখের বালি’ (১৯০৩), ‘নৌকাডুবি’ (১৯০৬), ‘যোগাযোগ’ (১৯২৯);

৩. রাজনৈতিক ও সমাজনীতিমূলক উপন্যাস: ‘গোরা’ (১৯১০), ‘ঘরে বাইরে’ (১৯১৬), ‘চার অধ্যায়’ (১৯৩৪); 

৪. রোমান্টিক ও তত্বমূলক উপন্যাস: ‘চতুরঙ্গ’ (১৯১৬), ‘শেষের কবিতা’ (১৯২৯), ‘দুইবোন’ ( ১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪)।

রবীন্দ্রনাথ তরুণ বয়সে ‘করুণা’ (১৮৭৭-৭৮) নামে একটি উপন্যাস লেখেন যা ‘ভারতী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস নিম্নে আলোচনা করা হলো –

১. বউ ঠাকুরানীর হাট: প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে মুঘলের সংগ্রামকে নিয়ে গড়ে উঠেছে বউ ঠাকুরের হাট। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতাপাদিত্যকে আদর্শবাদী মহানায়করূপে অঙ্কিত না করে এক উদ্ধত অবিনয়ী কুটিল রাজনীতিবিদের চরিত্রেই লেখক তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে তার খুল্লতাত বসন্ত রায়ের মধ্যে বিবিধ মানবিক গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছে। মাঝখানে থাকা প্রতাপাদিত্যের পুত্র ও কন্যা উদয়াদিত্য ও বিভার জীবন বেদনায় পরিসমাপ্ত হয়।

২. ‘রাজর্ষি’: ত্রিপুরার রাজবংশীয় কাহিনিকে নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। অহিংসার সঙ্গে হিংসার দ্বন্দ্ব উপন্যাসের কাহিনিতে ছায়ার মতন জড়িয়ে থেকেছে। নক্ষত্ররায়ের রাজ্যলোভ, রঘুপতির ব্রাহ্মণ্য অহঙ্কার, রাজ ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও জনগণের কল্যাণ রাজা গোবিন্দমাণিক্যের বাসনা উপন্যাসকে করেছে গতিময়। মনুষ্যত্বের উদ্বোধনই ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু।

৩. চোখের বালি: মানবহৃদয়ের জটিলতা গভীরতা ও বিস্ময়কে তিনি উন্মোচিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে। ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্রচিত্রণ দুক্ষেত্রেই ‘চোখের বালি’ উচ্চমানের শিল্পসৃষ্টি। মহেন্দ্র ও বিহারী অভিন্নহৃদয় বন্ধু। মহেন্দ্রর সঙ্গে সরলস্বভাবা আশার বিয়ে হয়। আগে বিনোদিনীর সঙ্গে মহেন্দ্রর বিয়ের কথা হয়, কিন্তু মহেন্দ্র রাজী না হওয়ায় বিনোদিনীর অন্যত্র বিয়ে হয় ও সে বিধবা হয়। মহেন্দ্রর মার ডাকে বিনোদিনী তাদের বাড়ি আসে ও মহেন্দ্র আশার দাম্পত্য জীবন দেখে তার প্রবল বাসনা কামনা-ঈর্ষা-বিদ্বেষ ও ঘর বাঁধবার তীব্র ইচ্ছা পরিস্থিতিকে জটিল অগ্নিগর্ভ করে তোলে। সৎ উন্নতস্বভাব বিহারীও এই আবর্তে জড়িয়ে পড়ে ও তার সততা বলিষ্ঠতা দেখে বিনোদিনী তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই চারটি চরিত্রের টানা পোড়েন জ্বালাদহন তীব্র দুঃসহ হয়ে দেখা দেয়। পুত্রস্নেহাতুর মায়ের মনোবাসনাও এতে তীব্রতার সঞ্চার করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সমাধান ঘটে, মহেন্দ্র-আশার মিলন হয়; মা পায় শান্তি, বিহারী আপন আদর্শের পথে চলে, বিনোদিনীও হয় শান্ত।

৪. নৌকাডুবি: নৌকাডুবি ঘটনা মুখ্য উপন্যাস। নৌকাডুবির ঘটনায় রমেশ রক্ষা পেলে চেতনা ফিরে পেয়ে দেখে তার পাশে এক অপরিচিতা বধূ শুয়ে আছে। বধূর নাম কমলা। রমেশকেই সে স্বামী বলে জানে। পরে কমলা নলিনাক্ষকে স্বামী জানতে পেরে নলিনাক্ষের কাছে ফিরে যায়। রমেশ হেমনলিনীকে নিয়ে সংসার করতে শুরু করে। কমলা রমেশকে ভালোবাসতে চেয়েছিল স্বামী ভেবেই, যখন বুঝল সে রমেশ তার স্বামী নয়, তখন তার প্রতি তার আর কোনো ভালোবাসাও ছিল না। কমলার ভাবনা হল— ‘আমি যদি সতী হই, তবে এই জীবনেই আমি তাঁহার পায়ের ধুলা লইব, বিধাতা আমাকে কখনই বাধা দিতে পারিবেন না”। নারীত্ব নয়, হিন্দু নারীর সতীত্ব এই উপন্যাসে বড়ো হয়েছে।

৫. গোরা: ‘গোরা’ (১৯১০) উপন্যাসটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনার শ্রেষ্ঠ শিল্পরূপ হিসাবে পরিগণিত হয়। দীর্ঘকার গৌরবর্ণ প্রবল ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন গোরা হিন্দুধর্মের সনাতন আদর্শ রক্ষায় তৎপর এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধেও সে সংগ্রাম প্রয়াসী। ভারতীয় জীবনাদর্শ ও নীতিবোধ তার মর্মমূলে বিরাজিত। কিন্তু গোরা শেষপর্যন্ত জানতে পারল যে সে আইরিশ পিতামাতার সন্তান, সিপাহী বিদ্রোহের সময় তার পিতামাতা মারা গেলে তাদের সদ্যোজাত শিশুকে মানুষ করেন কৃষ্ণাদয়াল ও আনন্দমরী, বিশেষ করে আনন্দময়ী তার গর্ভস্থ সন্তানের মতোই গোরাকে পালন করেন। এই সত্য জানার পর গোরার

সব বন্ধন টুটে যায়—তার কোনো জাত নেই কোনো সংস্কার নেই, সে যেন বিশ্বমানবতার প্রতীক। সে জননী আনন্দময়ীর মধ্যে খুঁজে পায় সত্যিকারের ভারতবর্ষকে যা বৃহৎ মহৎ যেন এক জ্যোতির্ময় কল্যাণপ্রতিমা। এপিকধর্মী এই উপন্যাসে দেশপ্রেম ও বিশ্বচেতনার সমন্বয় ঘটেছে—ত্যাগ মহিমা ও যুগযুগান্তের সাধনার প্রতীক ভারতবর্ষ তার মধ্যে মূর্ত হয়ে ওঠে। আনন্দময়ী সুচরিতা বিনয় ললিতা প্রমুখের চরিত্রও সুঅঙ্কিত। সমালোচক মনে করেন যে “কাহিনীর বিশালতা, চরিত্রের বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন ও বি-সম ভাবাদর্শকে একটা মহৎ সত্যের অভিমুখে চালিত করে রবীন্দ্রনাথ গোরা উপন্যাসকে বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়কর করে তুলেছেন।

৬. যোগাযোগ: কুমুদিনীর বিবাহর আগে জীবন এবং বিবাহের পরের জীবন নিয়ে যোগাযোগ উপন্যাসের আখ্যান রচিত হয়েছে। হঠাৎ ধনাগোমে ভীত গর্বিত মধুসূদনের সঙ্গে অভিজাত পরিবারে শান্ত স্নিগ্ধ কন্যা কুমুদিনীর বিয়ে হয় এবং দুই জীবনাদর্শের দ্বন্দ্ব দুই মনের সংঘাত তীব্র প্রবল হয়ে উঠলে কুমুদিনী তার অগ্রজ শান্ত স্থির তার আদর্শ মানুষ বিপ্রদাসের কাছে চলে আসে। মধুসূদনের বিত্তবাসনা ও কুমুদিনীর চিত্তবাসনার বন্ধু-প্রাবল্যের অবসান ঘটে কুমুদিনীর মাতৃত্বের সম্ভাবনায়। মধুসূদনের উদ্ধত অবিনয়ী ধনগর্বিত নীচতা, কুমুদিনীর আন্তর সৌন্দর্য ও সৌকুমার্য এবং স্নিগ্ধ মাধুর্য, বিপ্রদাসের মহিমান্বিত মর্যাদাসম্পন্ন আভিজাত্য ইত্যাদি উপন্যাসে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

৭. ঘরে-বাইরে: ঘরে-বাইরে’ উপন্যাসে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের মতামত প্রকাশিত হয়েছে। নিখিলেশ আদর্শবাদী উদার ও দেশপ্রেমিক – স্বদেশী আন্দোলনের সে সমর্থক। তার স্বভাবে একটা অভিজাত্য আছে। তার স্ত্রী বিমলাও পতিব্রতা ও স্বামীর আদর্শ গ্রহণে প্রস্তুত। অকস্মাৎ তাদের জীবনে আবির্ভূত হয় নিখিলেশের বন্ধু সন্দীপ যে বুদ্ধিমান বাকুনিপুণ এবং স্বদেশী আন্দোলনের প্রবল প্রবক্তা। নিখিলেশ ও বিমলা তাকে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করে মেনে নেয়, বিশেষত বিমলার ওপর সে প্রবল প্রভাব বিস্তার করে। শান্ত অনুচ্ছ্বসিত নিরাবেগ নিখিলেশের চেয়ে উদ্দাম উচ্চকণ্ঠ প্রাণপ্রাচুর্যময় এবং দেশের কথায় উচ্চকণ্ঠ সন্দীপকেই আদর্শ পুরুষ মনে করে বিমলা। তিন চরিত্রের দ্বন্দ্ব সংঘাত টানাপোড়েন তীব্র হয়ে ওঠে। শেষে দেখা গেল সন্দীপ প্রকৃতপক্ষে স্বার্থপর হীনমনা অর্থলোভী এবং বিমলার দেহের ওপরই তার প্রবল আকর্ষণ। শেষ পর্যন্ত বিমলার মোহমুক্তি ঘটে। সন্দীপের ভয়ংকর আকর্ষণ থেকে সে মুক্ত হয় ও নিখিলেশের মহিমাময় ব্যক্তিত্বের কাছেই ধরা দেয়।

৮. চার অধ্যায়: এই উপন্যাসেও দেখা যায় তথাকথিত দেশাত্মবোধ ও স্বাদেশিকতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ হিংসা ও ঘৃণার ছবি এঁকেছেন, সন্ত্রাসবাদের নির্মম রূপ তুলে ধরেছেন।

প্রেমের সঙ্গে বৈপ্লবিক আদর্শের সংঘাত দেখা দিয়েছে উপন্যাসে। কাহিনীর দুই প্রধান চরিত্র অতীন্দ্র ও এলার জীবনে এভাবেই নেমে এসেছিল ট্র্যাজেডি তাদের নিষ্ঠা আদর্শ বিপ্লববাদ এবং প্রেমচেতনা সার্থক পরিণতি না পেয়ে এক বেদনায় নিঃশেষিত হয়। 

৯. চতুরঙ্গ: ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসে মনস্তাত্বিক জটিলতার নিগূঢ় পরিচয় পাওয়া যায়। জ্যাঠামশাই শচীশ দামিনী ও শ্রীবিলাস এরাই উপন্যাসের চারটি অংশ বা জীবনের চারটি অঙ্গ যারা উপন্যাসের দেহ ও মন নির্মাণ করেছে। শচীশ ও দামিনীর মনস্তাত্বিক জটিলতা সম্পর্কের টানাপোড়েন জটিল রূপ পেয়েছে। ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতপক্ষে যুক্তিনিষ্ঠ মনণশীল ভাবনার রূপ দিয়েছে।

১০. শেষের কবিতা: “শেষের কবিতা’ রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক কবিকল্পনার শ্রেষ্ঠ গদ্যময় রূপ। উপন্যাসের কাহিনীটি ছিল শিলং পাহাড়ের আশ্চর্য পরিবেশে অমিতের সঙ্গে লাবণ্যের দেখা হল। বিধান বুদ্ধিমান সুরসিক কবিস্বভাব অমিতের সঙ্গে বিদুষী লাবণ্যময়ী লাবণ্যর সাক্ষাৎ যেন এক অপরূপ সৃজনমুহূর্ত। অমিত ও লাবণ্য পরস্পরের অনুরাগী হল। একদা লাবণ্যের পিতার প্রিয় ছাত্র শোভনলাল তাকে কামনা করলেও লাবণ্য তাকে রুঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে একসময় অমিত ইংলণ্ডে এক স্বর্ণালী সন্ধ্যায় কেতকীর হাতে পরিয়ে দিয়েছিল ভালবাসার আংটি কিন্তু সেই কেতকী শিলঙে অমিত-লাবণ্যের কথা শুনে সেই আংটি খুলে ফেলে—তার এনামেল করা মুখের উপর দিয়ে দরদর করে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অমিতের সঙ্গে কেতকীর ও লাবণ্যের সঙ্গে শোভনলালের বিয়ে

হয়। ‘শেষের কবিতা’য় রবীন্দ্রনাথের প্রেমতত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে যে, ক্ষুদ্রতায় প্রাত্যহিকতায় প্রেমকে আবদ্ধ করলে তার মধ্যে মালিনা আসে আবিলতা আসে, প্রকৃত প্রেম অমলিন দেহসীমার ঊর্ধ্বে তার অধিষ্ঠান, তা আত্মার জ্যোতিতে দ্যুতিময়। রবীন্দ্রনাথের দুই নারী তত্ত্ব— প্রিয়া ও জননীরূপে পুরুষের জীবনে নারীর প্রভাব প্রসঙ্গটি রূপায়িত হয়েছে ‘দুই বোন’ উপন্যাসে শর্মিলা উর্মিমালা ও শশাঙ্কর মধ্য দিয়ে।

১১.’মালঞ্চ’: উপন্যাসে এই প্রসঙ্গ আরো জটিল ও সমস্যাকন্টকিত মৃত্যুপথযাত্রিণী নীরজার স্বামীর প্রতি ভালবাসা, সঙ্গিনীর প্রতি ঈর্ষা ও শেষ পর্যন্ত অনিবার্যকে মেনে নেওয়ার কাহিনী উপন্যাসে বর্ণিত। এই উপন্যাসদুটি রবীন্দ্রনাথের দিব্যপ্রতিভার স্পর্শে সঞ্জীবিত না হলেও শিল্পহিসাবে কম আকর্ষণীয় নয়। 

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব: 

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান অবিস্মরণীয়।

১। শ্রী সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ শুধু যে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস তাহাই নহে। ইহা বাংলা সাহিত্যে যুগান্তর আনিয়াছিল।” বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে বিধবার অভিযানের একটা ক্রমবিকাশ আছে। প্রথম কুশনন্দিনীতে দেখিতে পাই তাহার কুণ্ঠিত, সলজ্জ, প্রেম মূৰ্ত্তি। বিনোদিনী বিধবার হৃদয়ের অভিব্যক্তি অন্য রকমের। সে ঔ লজ্জা নম্র কুণ্ঠা চলিয়া গিয়াছে। এরপরে বিধবার আর এক মূর্ত্তি দেখিতে পাই শরৎচন্দ্রের রাজলক্ষ্মী- সাবিত্রী- রমার মধ্যে। এদের হৃদয়ে বিনোদিনীর মতো তেজ ও সাহস ছিল না। এদের বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা প্রেমাকাঙ্ক্ষা ও ধর্মসংস্কারের মধ্যে সমন্বয় করিতে চেষ্টা করিয়াছে এবং তাহা করিতে পারে নাই বলিয়া তাহাদের জীবন মরুভূমি হইয়া গিয়াছে।

২। রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘গোরা বাংলা সাহিত্যে আজ পর্যন্ত একমাত্র উপন্যাস—যে উপন্যাসে সমগ্র শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের একটি বিশেষ যুগের সামাজিক চিন্তাধারা ও আদর্শ, সমস্ত বিক্ষোভ, আন্দোলন, ধর্ম ও জাতীয় জীবনের নতুন আদর্শ সন্ধানের সমস্ত ভাবাবেগ ও চিন্তা বিপর্যয় যুক্তি-তর্কের উত্তাপ, অনুভূতির উদ্দীপনা, বুদ্ধি ও বীর্যের দীপ্তি। একমাত্র উপন্যাসটিতে বৃহত্তর অর্থে সমসাময়িক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আদর্শের সঙ্গে স্ত্রী ও পুরুষের ব্যক্তির সংযোগের অবস্থান লইয়া সার্থক সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়াস দেখিতে পাওয়া যায়।

৩। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কাব্যধর্মী উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হল রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা।

৪। বাংলা উপন্যাসে আধুনিকতার সূচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্রের পর বাংলা উপন্যাসে অগ্রগতি যখন বৃদ্ধপ্রায় হইয়াছিল, তখন রবীন্দ্রনাথই তাহার জন্য নূতন পথ উন্মুক্ত করিয়াছেন।

৫। ‘ঘরে-বাইরে’ উপন্যাসেই রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম চলিত ভাষা প্রয়োগ করেছেন।

আরো পড়ুন

বাংলা শিশু সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের অবদান

বাংলা নাট্য সাহিত্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা সাহিত্যে ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা ছোট গল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান আলোচনা করো

বাংলা নাট্য সাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান আলোচনা করো

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো

বাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

Leave a Comment

error: Content is protected !!