রামমোহন রায়ের উদারনীতিক ভাবনার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো

Q: রামমোহন রায়ের উদারনীতিক ভাবনার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
Q: রাজা রামমোহন রায়ের উদারনীতিবাদ সম্পর্কে লেখো

উত্তর:

রামমোহন রায়ের উদারনীতিক ভাবনার বৈশিষ্ট্য

ইউরোপে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে উদারনীতিক মতবাদের জনক হিসাবে যেমন ইংরেজ দার্শনিক জন লকের নাম উচ্চারণ করা হয়। তেমনি ভারতে উদারনীতিক চিন্তা- চেতনার প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে রামমোহনের নাম করা হয়। ভারত পথিক রামমোহন রায়ই ছিলেন ভারতীয় উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা। কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ানি ও সংকীর্ণতার অন্ধকারে ভারত ও ভারতবাসী যখন আচ্ছন্ন তখনই রাজা রামমোহন রায় তার উদারনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কারমূলক চিন্তাধারার মাধ্যমে এক সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ার এক কর্মযজ্ঞের সামিল হন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদারনীতির কথা বলেছে-

ক) শিক্ষাক্ষেত্রে উদারনীতিবাদঃ- রামমোহন রায় ভারতীয়দের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের ওপর বিশেষ জোড় দেন। দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করতেন। এক্ষেত্রে রামমোহন রায় ইংরেজী ভাষা শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। রামমোহন রায় চেয়েছিলেন ভারতবাসী পাশ্চাত্যের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইউরোপের উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হবেন।

খ) ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদারনীতিবাদঃ- ধর্মীয় বিষয়েও রামমোহন রায়ের উদারনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায়। একজন আধুনিক চিন্তাবিদ হিসেবে রামমোহন রায় ধর্ম সম্পর্কে মানবতাবাদী ও বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গীর উপর গুরুত্ব আরোপ করে যাবতীয় ধর্মীয় গোড়ামি ও রক্ষাশীলতা দূরীকরণে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

গ) বিশ্বজনীনতার ক্ষেত্রে উদারনীতিবাদঃ-  রাজা রামমোহন ছিলেন বিশ্বজনীন মানবতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই বিশ্বমানবতাবাদী চেতনার মাধ্যমেও রামমোহনের উদারনীতিক ধ্যান-ধারণার অভিব্যক্তি ঘটেছে। স্বৈরতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের শৃঙ্খল থেকে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের মানুষের স্বাধীনতা ছিল রামমোহনের বাসনা।

ঘ) অর্থনীতির ক্ষেত্রে উদারনীতিবাদঃ- আর্থনীতিক ধ্যান-ধারণার মাধ্যমেও রামমোহন রায়ের উদারনীতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। জমিদারের অন্যায়-অবিচার থেকে সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে রামমোহনের আন্তরিকতার অন্ত ছিলনা।

ঙ) আইনের অনুশাসনের ক্ষেত্রে উদারনীতিবাদঃ- রাজা রামমোহন আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ও আইনের অনুশাসন নীতির সমর্থনে মতামত ব্যক্ত করেছেন। আইনের অনুশাসন নীতির সমর্থনসূচক বক্তব্যের মাধ্যমেও রামমোহনের উদারনীতিক মতাদর্শের অভিব্যক্তি ঘটেছে। আইনের অনুশাসন বা আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ব্রিটিশ শাসন ও সমাজব্যবস্থার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। অথচ ভারতে শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার আইনের দৃষ্টিতে সাম্য নীতিকে স্বীকার করছিল না।

পশ্চিমী বুর্জোয়া রাষ্ট্রদর্শনের প্রতি রাজা রামমোহনের বিশেষ আগ্রহ ও আকর্ষণ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন

ডেভিড হেল্ড এর গণতন্ত্র মডেলটি আলোচনা করো | David Held’s Model of Democracy

ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার | Fundamental Rights of Indian Constitution

ভারতের অধস্তন আদালতের কার্যাবলী | Functions of Subordinate Courts in India

সমাজ কাকে বলে | What is Society in Bengali

সামাজিক পরিবর্তন কি | সামাজিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য | Meaning and Characteristics of Social Change

সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!