পরিনমন কি | পরিণমনের বৈশিষ্ট্য | শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব কি | Maturation in Bengali

Q: পরিনমন কি | পরিণমনের বৈশিষ্ট্য | শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব কি | Maturation in Bengali
Q: পরিনমন কী
Q: পরিনমন কথার অর্থ কি
Q: পরিনমন কাকে বলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করো

উত্তর:

পরিনমন (Maturation) :

শিখন যেমন আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যাক্তি অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ঠিক তেমনি মানব জীবনের স্বাভাবিক বা স্বতঃস্ফূর্ত বৃদ্ধির ফলে আচরণের পরিবর্তন ঘটে, এই ধরনের আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যা জৈবিক বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিনমন। এই আচরণ পরিবর্তনের জন্য শিশুর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়না। শিশু জন্মাবার পর একেবারে অসহায় অবস্থায় থাকে। এরপর আস্তে আস্তে উপুড় হতে শেখে, বসেছে শেখে, হামাগুড়ি দেয়, দাঁড়াতে পারে, হাঁটতে পারে, এজন্য শিশুটির কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনী প্রযােজন হয় না। নিদিষ্ট বয়সে তা আপনা আপনি সংগঠিত হয়। তাই মনােবিদদের মতে পরিনমন হল, বৃদ্ধি ও বিকাশের এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনী ছাড়াই ঘটে |

পরিণমনের সংজ্ঞা (Definition of Maturation):

বিভিন্ন মনােবিজ্ঞান বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিণমনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। মনােবিদ স্কিনার (Skinner) বলেছেন, ‘পরিনমন হল এক ধরনের বিকাশ যা পরিবেশগত অবস্থায় ব্যাপক তারতম্য থাকলেও মােটামুটি ভাবে নিয়মিত সংঘটিত হয়’। মনােবিদ ম্যাকগিয়ক (J.A.Mcgeoch) বলেছেন, জৈবিক বিকাশ এর দরুন বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই আচরণ ধারা যে পরিবর্তন হয় সেই পরিবর্তনই হল পরিনমন। মনােবিদ কোলেসনিক (Kolesnic) বলেছেন, সহজাত সম্ভাবনা গুলির স্বাভাবিক বিকাশের ফলে ব্যক্তির গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তনকেই পরিমন বলে। মনােবিদ গেসেল (Gesell) এর মতে – ‘সক্রিয় ও অন্তর্জাত ও বৃদ্ধি হল পরিনমন’। মনােবিদ থম্পসন (Thompson) এর মতে – পরিমন প্রক্রিয়া হল একটি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু একজন পরিনত মানুষরূপে গড়ে ওঠে, যে প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে শিশুর বাহ্যিক প্রভাব বা উপাদান ছাড়া দৈহিক পরিবর্তন ঘটে।

পরিণমনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Maturation) :

1) স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া – পরিনমন হল স্বতস্ফূর্ত আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে জৈবিক বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল এর জন্য কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। 

2) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া – পরিনমন কোন শর্ত ছাড়াই ব্যক্তিজীবনের সংঘটিত হয়। ব্যক্তির চাহিদা বা সমাজে চাহিদা, প্রবণতা, পরিস্থিতি কোন কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রাণীর সুস্থতা এর একমাত্র শর্ত, অসুস্থতা পরিণামনে বাধার সৃষ্টি করে। যেমন পােলিও রােগে আক্রান্ত শিশু স্বাভাবিক পরিণমনের অভাবে ঠিক মতাে দাঁড়াতে পারে না। 

3) নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক প্রক্রিয়া –

দৈহিক বৃদ্ধি যতদিন ঘটে পরিনমন ততদিন বজায় থাকে। তাই পরিণমন একটি নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয় না।

4) চাহিদা নির্ভর নয় – পরিমন প্রক্রিয়াটি শিশুটি চাহিদার উপর নির্ভর করে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে দৈহিক পরিবর্তন ঘটে তা পরবর্তীকালে শিশুর কোন বিশেষ চাহিদাকে পূরণ করতে সহায়তা করে। যেমন- পরিণামনের ফলে বৃদ্ধি প্রাপ্ত শরীরে অধিক খাদ্যের প্রযােজন হয়। 

5) দৈহিক ক্ষমতা অর্জন – পরিণত মূলত শিশুর বৃদ্ধি ও দৈহিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। যেমন- শিশু জন্মাবার পর একটি নির্দিষ্ট বয়সে উপুড় হতে পারা, বসতে পারা, দাঁড়াতে পারা, হাটতে পারা এগুলি তার পরিমনের ফল। ফলে পরিনমন হল এমন এক শ্রেণীর ধরনের প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে নতুন কর্মদক্ষতা আসে এবং কর্মদক্ষতার সাহায্যে আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

6) আত্মসক্রিয়তা ভিত্তিক নয় – পরিমনের জন্য ব্যক্তির আত্মসক্রিয় হওয়া অপরিহার্য নয়। অজান্তেই শরীরের অভ্যন্তরীণ নিয়মে ব্যক্তির পরিমন সংঘটিত হয় তবে পরিণমনের ফলে ব্যক্তির যখন কোনাে আচরণ সম্পাদন করে তখন তার মধ্যে কিছুটা সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়।

7) সহজাত এবং সার্বজনীন প্রক্রিয়া – এটি একটি সহজাত ও সার্বজনীন প্রক্রিয়া| জন্ম সূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনা উপর নির্ভরশীল। সমজাতীয় সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া একই ভাবে সম্পন্ন হয়। যেমন – হাঁটার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব শিশুই প্রথমে হামাগুড়ি দেয়, তারপরে দাঁড়াতে পারে, সবশেষে হাঁটাতে পারে| এ প্রক্রিয়া ব্যক্তিজীবনের স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হয়। তবে কোন জৈবিক ত্রুটি থাকলে পরিণমনের সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। 

৪) জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয় – পরিণমন প্রক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেখা যায় এবং পূর্ণ পরিণতির স্তরে পৌঁছালে তা লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন কোন একটি নির্দিষ্ট বয়সে দাঁড়াতে শেখে, দৌড়াতে শেখে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে শিশুর দৈহিক বিকাশ সম্পন্ন হয়। নির্দিষ্ট সময় না হলে কখনাে শিশু হাঁটাতে বা দৌড়াতে পারে না। সেই কারণে পরিণমন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয়।

শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব :

শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব অপরিসীম। 

1) প্রত্যেকটি ব্যক্তির কতগুলি শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য রযেছে। যেগুলির বিকাশ কেবলমাত্র পরিণমনের মাধ্যমেই সম্ভব। উপযুক্ত পরিনমন না ঘটলে শিশু যথাযথভাবে পাঠগ্রহণ করতে পারেনা। 

2) শৈশব ও কৈশাের কালে পরিণমনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়। জীবন বিকাশের এই দুটি স্তরে যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এবং পরিনমন অনুযায়ী যাতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 3) পরিনমন যেহেতু শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই উপযুক্ত শিখনের মাধ্যমে এই আচরণ গুলিকে আয়ত্ত করতে হবে। 

4) যে কোন শিখন প্রচেষ্টার কার্যকারিতা শিশুর পরিণমনের ওপর নির্ভর করে, ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করার সময় বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। 

5) শিখনের সীমা পরিনমন দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। শৈশব থেকে পরবর্তী জীবনে পরিণমনের প্রভাব কমে যায়। সেই কারণে স্তর অনুযায়ী শিখনকে কার্যকর করতে হয়। অর্থাৎ, পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় কোন বয়সে কি ধরনের শিখন কার্যকারী হবে।

আরো পড়ুন

শিখন ও পরিনমনের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক কি

কৈশোরকাল | কৈশোরকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য, চাহিদা | Adolescence in Bengali

মনোযোগ কাকে বলে | মনোযোগের প্রকৃতি গুলি কি কি | Attention in Bengali

শিখন কি | শিখনের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Learning in Bengali

ব্যক্তিত্ব কি | ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য | Definition and Characteristics of Personality in Bengali

গঠনবাদ | শিখনের গঠনবাদ তত্ত্ব | ভিগটস্কির শিখন মতবাদ | Constructivism in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!