থর্নডাইকের শিখনের মূলসূত্র গুলি কি কি | Thorndike’s Theory of Learning

Q: থর্নডাইকের শিখনের মূলসূত্র গুলি কি কি | Thorndike’s Theory of Learning
Q: থর্নডাইকের শিখন তত্ত্ব
Q: থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্ব
Q: থর্নডাইকের শিখনের সূত্র কটি

উত্তর:

থর্নডাইকের শিখনের মূলসূত্র (Thorndike’s Theory of Learning) :

আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী E. L. Thorndike এর মতে প্রাণী শেখে প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে। তিনি বিভিন্ন প্রাণীর উপর শিখন সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং 1911 সালে Animal Intelligence নামক গ্রন্থে প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ব প্রকাশ করেন।

থর্নডাইকের শিখনের মূলসূত্র
থর্নডাইকের শিখনের মূলসূত্র

থর্নডাইকের মতে Learning is the result of associations between Stimulus and response’ অর্থাৎ উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যথাযথ সংযোগ স্থাপনই হল শিখন।

সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে প্রাণী কি ধরনের প্রতিক্রিয়া করে এবং কিভাবে শিখন লাভ করবে সেই বিষয়ে থর্নডাইক তিনটি মুখ্য সূত্র এবং পাঁচটি গৌণ সূত্রের কথা বলেছেন। সেগুলি হল-

থর্নডাইকের মুখ্য সূত্র :

(1) প্রস্তুতির সূত্র (Law of readiness): থর্নডাইক বলেছেন শিখনের পূর্বে শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। শিক্ষার্থী শেখার ক্ষেত্রে যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তার শিখনটি সন্তোষজনক হয়। যদি শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে প্রস্তুত না থাকে সেক্ষেত্রে শিখন অসন্তোষজনক হয়। তাই শিক্ষকের উচিত শিক্ষা দানের পূর্বে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের উপযোগী করে ভোলা।

(2) ফললাভের সূত্র (Law of effect): থর্নডাইকের ফললাভের সূত্র অনুযায়ী শিখন এর ফল যদি শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দদায়ক হয় তাহলে সেই শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং শিখন এর ফল যদি শিক্ষার্থীদের কাছে বেদনাদায়ক হয় তাহলে সেই শিখন ব্যর্থ হয়। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন কে কার্যকরী করতে পাঠ্য বিষয়কে আরো আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করে।

(3) অনুশীলনের সূত্র (Law of exercise): অনুশীলনের সূত্রে থর্নডাইক বলেছেন, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ফলে প্রাণীর মধ্যে যে শিখন হয়, সেই শিখন লব্ধ অভিজ্ঞতাকে ধরে রাখতে হলে মাঝে মাঝে অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। অনুশীলনের অভাব হলে শিখন পরবর্তীকালে ব্যর্থ হয়। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের শিখন লব্ধ বিষয়কে মাঝে মাঝে অনুশীলন করাতে হবে। অনুশীলন করালে শিখন লব্ধ অভিজ্ঞতাটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ স্থায়ী হয়।

থর্নডাইকের গৌণ সূত্র

(1) বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র (Law of Multiple Response):  প্রাণী কোন নতুন পরিস্থিতিতে পড়লে সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পূর্বে অর্জিত জ্ঞান দ্বারা একই উদ্দীপকের উপর বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া করে সমস্যার সমাধান করতে চায়। এই নানা ধরনের প্রতিক্রিয়াকে থর্নডাইক বহুমুখী প্রতিক্রিয়া বলেছেন।

(2) আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র (Law of partial Activity): থর্নডাইকের মতে প্রাণী সামগ্রিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়া করে না। সমগ্র অংশকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে, প্রতিটি অংশে বিশেষ প্রতিক্রিয়া করে শিখন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে।

(3) মানসিক প্রস্তুতির সূত্র (Law of Mental set):  কোন কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির মানসিক প্রস্তুতি বিশেষ প্রয়োজন। তাই শিখন তখনই সম্ভব হয় যখন যথার্থ মানসিক প্রস্তুতি থাকে। শিক্ষার্থীর শিক্ষনীয় বিষয়টি তখনই যথার্থ হয় যখন সে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে।

(4) সাদৃশ্য বা উপমানের সূত্র (Law of Analogy):  প্রাণী যখন কোন নতুন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বের অবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করে। পূর্বে যেভাবে প্রতিক্রিয়া করে সমস্যার সমাধান করেছিল বর্তমানেও সেভাবে প্রতিক্রিয়া করে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করে। একেই সাদৃশ্য বা উপমানের সূত্র বলা হয়।

(5) অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালন সূত্র (Law of Associative Shifting): থর্নডাইকের মতে শিখনের সময় কোন উদ্দীপকের পরিপেক্ষিতে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় কখনো কখনো সেই একই রকম প্রতিক্রিয়া অন্য কোন উদ্দীপকের ফলেও সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, মূল উদ্দীপকের পরিবর্তে অন্য কোন উদ্দীপক যদি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তখন তাকে অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের নীতি বলে।

থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুল তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational Significance of Thorndike’s Trial and Error Theory) :

(1) শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষার্থীর মানসিক ও দৈহিক প্রস্তুতির ওপর। শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থী যদি প্রস্তুত না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণ দুটি কাজই সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয় না। সেক্ষেত্রে মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনের পূর্বে শিক্ষককে বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

(2) শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রচুর সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা অর্জিত জ্ঞানকে পুনরাবৃত্তি করতে পারে। বাংলা পুরনো বিষয় বারবার অনুশীলন করতে হবে তা নাহলে শিখন দুর্বল হয়ে পড়বে।

(3) পাঠ্য বিষয়বস্তু অবশ্যই শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে মিল রেখে অর্থাৎ বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে স্থির করতে হবে। যা শিক্ষার্থীদের বোধগম্য হবে। এবং শিক্ষণ পদ্ধতি অবশ্যই শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর ও তৃপ্তিদায়ক হতে হবে। তবেই শিখন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ হবে।

(4) কোন সমস্যা সমাধানে শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য না করে আংশিকভাবে সাহায্য করবেন। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহের সঞ্চার হয় এবং সে নিজে সমস্যার সমাধানে সক্রিয় হয়ে ওঠে। 

(5) শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য বারবার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা নিজেদের ভুলগুলি বুঝতে পেরে নিজেরাই সেগুলি সংশোধনের চেষ্টা করে।

(6) নতুন কোন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার সময় পুরনো বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য রেখে বিষয়টি শিক্ষা দিলে শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

(7) শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় জীবনে যে সমস্ত অভ্যাস, মনোভাব, আগ্রহ ইত্যাদি অর্জন করবে পরবর্তীকালে তা বৃহত্তর জীবনেও প্রয়োগ করতে পারবে।

আরো পড়ুন

গেস্টাল্ট মতবাদ কি | গেস্টাল্ট মতবাদের মূল সূত্র বা নীতি

মেকলে মিনিট কি | Macaulay Minute in Bengali

লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি | Lord Curzon-Educational Policy in Bengali

স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো

ব্যক্তিত্বের অভীক্ষা বা পরিমাপ | Measurement of Personality in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!