শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ | Right to Education (RTE) Act 2009 in Bengali

Q: শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ | Right to Education (RTE) Act 2009 in Bengali
Q: শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এর উদ্দেশ্য
Q: শিক্ষার অধিকার আইন বৈশিষ্ট্য

উত্তর:

শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ (Right to Education Act 2009)

শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯
শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯

2009 সালের 27 আগস্ট Right to free and compulsory education Act (RTE) ভারতবর্ষের সংসদে পেশ করা হয়। পরবর্তীকালে 2010 সালে 16th February বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এবং 2010 সালের 1st April থেকে এটি আইন হিসেবে সারা ভারতে বলবৎ করা হয়। ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে এই ধরনের আইন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই আইনের ভালোমন্দ বিচার বিবেচনায় দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় The National Commission for Protection of Child Rights বা NCPCR র উপর।

শিক্ষার অধিকার আইন বা Right to Education (RTE) এর বৈশিষ্ট্য :

(1) অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা : এই আইন অনুযায়ী 6-14 বছর বয়সি সকল শিশুর বিদ্যালয়ে নাম নথিভুক্তকরণ, উপস্থিতি ও শিক্ষা সমাপ্তকরণে আর্থিক বাধা যেন কোনো কারণ না হয়। তাছাড়া শিশুর বাসস্থান থেকে 1 km দূরত্বের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং 3 km দূরত্বের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকতে হবে। 

(2) বাধ্যতামূলক শিক্ষা :

• সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে নাম নথিভুক্তকরনের সুযোগ দিতে হবে।

• বিদ্যালয় ছুট বা Drop Out হওয়া সমস্ত শিশুকে চিহ্নিত করতে হবে।

• সকল শিশু বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করা।

• সকল শিশু প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করল কি না তা পর্যালোচনা করা।

• অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করা যাতে তারা তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাবার ব্যাপারে উৎসাহবোধ করেন।

• বয়স অনুযায়ী শ্রেনী নির্বাচন: এই আইনে শিশুদের বয়স অনুযায়ী শ্রেনি নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। যেমন 10 বছর বয়সি কোনো শিশুকে পঞ্চম শ্রেনিতেই ভর্তি করতে হবে।

(3) শিক্ষক :

• প্রত্যেক শিক্ষককে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ন্যূনতম শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

• শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে। পার্শ্বশিক্ষক (Para teacher)-এর ধারণা বাতিল করতে হবে।

(4) পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক : দেশের সকল বিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক তৈরির সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক বয়স ও শিখন স্তরের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

(5) বিদ্যালয় :

• প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কর্মদিবস হবে যথাক্রমে 200 দিন ও 220 দিন।

• প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাক্রমে 4 ও 5 ঘণ্টা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকবে।

• বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত 1:30 হলে ভালো।

• প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ, লাইব্রেরি, রান্নাঘর এবং সীমানা নির্ধারণকারী দেওয়াল থাকবে। পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক শৌচাগার ও পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকবে।

(6) মূল্যায়ন ব্যবস্থা :

• মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সারা বছর ধরে চলবে।

• পাশ ফেল প্রথা থাকবে না।

• প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক Pupil Cumulative Record (PCR) তৈরি ও সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন। বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করছে কি না তার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।

(7) বেসরকারি বিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষণ : পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে ভরতি হতে পারে তার জন্য 25% আসন সংরক্ষণ করতে হবে। পূর্বোক্ত কাজের জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ভর্তুকি পাবে।

(8) প্রয়োগকারী ও তত্বাবধানকারী সংস্থা :

• RTEA ঠিকমতো রূপায়িত হচ্ছে কি না তা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করবে National Commission for Protection of Child Rights (NCPCR).

• রাজ্য স্তরে SCPCR বা State Commission for Protection of Child Rights.

• NCPCR /SCPCR Civil Court র ন্যায় কাজ করবে অর্থাৎ এদের হাতে আইনি ক্ষমতাও থাকবে।

• RTEA প্রয়োগ করার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে শিক্ষা দপ্তরের উপর। শিক্ষা দপ্তর আবার PRI (Panchayati Raj Institution) এরসঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করবে।

(9) শিক্ষার অধিকার ও শিক্ষার অধিকার আইন :

• 6-14 বছরের প্রতিটি শিশুর বিনামূল্যে এবং আবশ্যিক ভাবে শিক্ষাপ্রাপ্তির অধিকার আছে। সংবিধানের 86 তম সংশোধনের 21A Act এ এটা বলা আছে। শিক্ষার অধিকার বিল এই সংশোধনকে কার্যকরী করার প্রচেষ্টা।

• সরকারি বিদ্যালয় সবশিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা দেবে এবং বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি দ্বারা সেগুলি পরিচালিত হবে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে 25% ছাত্র বিনামূল্যে ভরতি করা হবে।

• জাতীয় মৌলিক শিক্ষা আয়োগ গঠিত হবে গুণগত মানসহ শিক্ষার সমস্ত দিক দেখাশোনার জন্য।

শিক্ষার অধিকার আইনের বিভিন্ন দিক :

1. এই আইনটি গঠনের সোপান হিসেবে নিশ্চিত করে শিশুর উচ্চমানের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রাপ্তির দাবি (অধিকার হিসেবে) এবং রাষ্ট্র, পরিবার ও সম্প্রদায়ের সাহায্যে সেটা পূরণ করে।

2. কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার RTE এর আর্থিক দায়িত্ব ভাগ করে নেবে। কেন্দ্রীয় সরকার খরচের আনুমানিক হিসাব করবে। রাজ্য সরকারকে এই খরচের কিছুটা শতকরা অনুপাত দেওয়া হবে।

3. কেন্দ্রীয় সরকার অর্থকমিশনকে অনুরোধ করতে পারে রাজ্য সরকারকে কিছু বাড়তি সম্পদ দিতে যাতে রাজ্য সরকার RTE-র কাজ গুলো করতে পারে।

4. রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হবে বাকি অর্থের সংস্থান করা। মাঝখানে একটা অর্থসংস্থানের ফাঁক থাকবে, সেটার জন্য সভা সমাজ, উন্নয়নকারী সংস্থা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং দেশের নাগরিকদের সহায়তা দরকার।

5. RTE Act যাতে 1st April থেকে চালু হয় সেই জন্য খসড়া নিয়মগুলি রাজ্যগুলিকে জানানো হয়েছে তাদেরকে নিজেদের রাজ্যের নিয়ম বানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘোষণা করতে হবে।

6. RTE যেখানে পৌছানো যায়নি সেখানে পৌঁছানোর একটা উপযুক্ত মঞ্চ দেয় দুর্বল শ্রেণির জন্য বিশেষ সূযোগসহ, যথা শিশুশ্রমিক, বিশেষ প্রয়োজনসম্পন্ন শিশুসমূহ অথবা যাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক, ভৌগোলিক, ভাষাগত, লিঙ্গগত বা এধরনের কারণে অসুবিধা আছে। RTE ভালো মানের শিক্ষণ এবং শেখার প্রতি নজর দেয় যার জন্য বেশি চেষ্টা এবং যথাযথ সংস্কার দরকার হয়।

7. এক মিলিয়নের বেশি নতুন এবং প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষককে পাঁচ বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কর্মরত শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো যাতে শিশুবান্ধব শিক্ষা দেওয়া যায়।

8. ভারতবর্ষের অনুমিত 190 মিলিয়ন মেয়ে এবং ছেলে, যাদের আজ বিদ্যালয়ে হওয়া উচিত ছিল, তাদের শিশুবান্ধব শিক্ষার জন্য পরিবারগুলি এবং সম্প্রদায় সমূহেরও বিরাট কৰ্তব্য আছে।

9. মান এবং ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য অসমতা দূর করতে হবে। 

10. আট মিলিয়ন বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুকে বয়সানুপাতিক স্তরের শ্রেণিতে আনা এবং বিভিন্ন সহায়তার সাহায্যে বিদ্যালয়ে রাখতে সফল হওয়া একটা বিরাট বাধা, যার জন্য নমনীয় এবং উদ্ভাবনমূলক প্রচেষ্টা দরকার।

11. শিশুর অধিকার রক্ষার জাতীয় কমিশনটি এই আইনের অধীনে প্রদত্ত অধিকার রক্ষা নিরীক্ষণ করবে, অভিযোগের তদন্ত করবে এবং কোনো মামলার বিচার বিষয়ে দেওয়ানি আদালতের সমান ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। 

12. রাজ্যগুলিকে 1 এপ্রিল থেকে 6 মাসের মধ্যে শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য রাজ্য কমিশন (SCPCR) অথবা শিক্ষার অধিকার রক্ষা কর্তৃপক্ষ (আরইপি) গঠন করতে হবে। অভিযোগ দায়ের করতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই জমা করবে।

13. আবেদনগুলি SCPCR / REPA দ্বারা নির্ধারিত হব। অপরাধের বিরুধে মামলা করার জন্য উপযুক্ত সরকার অনুমোদিত আধিকারিকের সম্মতি লাগবে।

14. অসমতা দূর করার জন্য এবং মান ও ন্যায় পরায়ণতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা দরকার। সরকার, সমাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রচার মাধ্যম একটি প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রাসঙ্গিক স্বার্থসম্পন্নদের একসাথে করার ভূমিকা নেবে UNICEF.

15. UNICEF জনগণের অবগতির জন্য অংশীদার যোগার করবে এবং সক্রিয়তার জন্য ডাক দেবে। নীতি এবং অনূক্রমের নকশা/রুপায়ণ শিক্ষার প্রাপ্যতা এবং মান উন্নয়নে জোর দেবে যার উপর ভিত্তি করে শিশুদের জন্য ভালো ফল পাওয়া যায়। অংশীদারদের সাথে কাজ করে UNICEF জাতীয় এবং রাজ্যস্তরের নিরীক্ষণ সমিতি জোরদার করবে।

Frequently Asked Questions :

Q: শিক্ষার অধিকার আইন (RTE Act) কবে কার্যকরী হয়?
Ans:
শিক্ষার অধিকার আইন (RTE Act) 2009 সালের 4ঠা আগস্ট প্রস্তাবিত হয় এবং 2010 সালের 1লা এপ্রিল কার্যকরী হয়।

Q: শিক্ষার অধিকার আইন কত সালে চালু হয়?
Ans:
2009 সালে।

Q: শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এর উদ্দেশ্য কি ছিল?
Ans:
শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করা।

আরো পড়ুন

ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার | Fundamental Rights of Indian Constitution

শিক্ষার অর্থ ও সংজ্ঞা | শিক্ষার প্রকৃতি | Meaning and Nature of Education

শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য | Concept and Characteristics of Educational Technology

শিক্ষার লক্ষ্য | Aims of Education in Bengali

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা করো | Nature and Scope of Educational Psychology in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!