শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ধর্মের অবদান সংক্ষেপে লেখ

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ধর্মের অবদান সংক্ষেপে লেখ

উত্তর:

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ধর্মের অবদান

সমাজবদ্ধ মানুষের প্রথম এবং প্রাথমিক শর্ত হলো সামাজিকীকরণ। এই সামাজিকীকরণের পথে নানান সামাজিক উপাদান যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি আসে। সামাজিকীকরণের প্রথম কাজ হলো শৈশব থেকে ব্যক্তিকে সমাজ ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষার দ্বারা সংগতি বিধানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ধর্মের অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো-

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কৃতির অবদান :

ল্যাটিন “Colere” শব্দ থেকে ইংরেজি “Culture” কথাটি এসেছে। যার অর্থ হলো অভ্যাস এর দ্বারা প্রাপ্ত কোন বিষয়, তবে এই অভ্যাস বুদ্ধি বা বিচারের ক্ষমতা ও হতে পারে।

সংস্কৃতি আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক এই দুই জীবনকে প্রভাবিত করে চলে। সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ সমাজে চলতে পারে না। এর কতগুলি প্রয়োজনীয়তা হল –

শিশু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে থেকে সংস্কৃতির মূল আদর্শ গড়ে তোলে, যা তাকে সমাজে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বীকৃতি দেয়।

সংস্কৃতি দ্বারা সুসংবদ্ধ ব্যক্তিজীবন গঠিত হয়। যেমন- পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ইত্যাদি।

সংস্কৃতি এক সামাজিক শক্তি। যার দ্বারা সামাজিক বন্ধন অটুট হয়। ব্যক্তির যাবতীয় মূল্যবোধ সংস্কৃতি গড়ে দেয় যার দ্বারা গোষ্ঠী জীবন সুসংবদ্ধ, সুসংগত, স্বাচ্ছন্দ ও গতিশীল হয়।

ফলে সংস্কৃতি হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যা ব্যক্তিকে সুন্দর ও কল্যাণকর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এর দ্বারা সৃষ্টি জীবনের ধারা অব্যাহত থাকতে আর সত্যতা এক এক পা এগিয়ে চলে। ব্যাপক অর্থে সংস্কৃতির যদি মানব জীবনে সবচেয়ে বড় মূল্যবোধ হয় তবে শিক্ষা হল এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা মানুষ এই মূল্যবোধকে গ্রহণ করে। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির পারস্পরিক সহযোগিতায় সমাজ তার কাঙ্ক্ষিত রূপটিকে খুঁজে পায় এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মের অবদান :

ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি “ধূ” ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ হলো মানুষকে ধারণ করে রাখা। অর্থাৎ মানুষের জীবনধারা কে ধারণ করে আছে যে সমস্ত আচরণ অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, রীতিনীতি, প্রথা তাই হলো ধর্ম।

ফলে ধর্ম হল এমন একটি সত্তা যা অতিমানবিক, অতিপ্রাকৃত ও উচ্চতর শক্তিসম্পন্ন সত্তার অস্তিত্ব। যদিও মার্কসবাদের নীতিতে ধর্মের স্থান নেই।

1. ধর্ম হল বিশ্ব জননী :- সমগ্র পৃথিবীতে ধর্মের অস্তিত্ব বর্তমান।

2. চাহিদা মেটানো :- মানবজীবনে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে এক বিশেষ ধরনের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য।

3. স্বার্থসিদ্ধি :- মানুষ তার অধিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ধর্মকে অধিক গুণসম্পন্ন ও শক্তিশালী পরম সত্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

4. মনস্তাত্ত্বিক :- ধর্মের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হলো এই যে, এই শক্তিশালী পরমসত্তার উপর নির্ভর

করে সৃষ্টি হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ভয়, প্রেম, শ্রদ্ধা ইত্যাদি।

5. ধর্মের প্রকাশ :- বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ক্রিয়া-কলাপ ইত্যাদি দ্বারা ধর্ম প্রকাশ পায়।

6. জীবনের পূর্ণতা :- কারো কারো মতে, ধর্ম চেতনার সাথে একাত্ম হয়। জীবনের নানা আকাঙক্ষার পরিতৃপ্তি ঘটে। আর এইভাবে মানবজীবনের পরিপূর্ণতা আসে।

7. সামাজিক দিক :- সমাজ জীবনের ওপর ধর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য। ধর্মের সাথে নীতিবোধের মিল ঘটিয়ে সভ্যদের এক করে রাখে।

8. ধর্ম ও জীবন ধারা :- বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জীবনধারার বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। যেমন বিবাহ, গৃহ প্রবেশ, হালখাতা, ধান্য রোপন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শপথ ইত্যাদি।

9. ব্যক্তি সত্তার বিকাশ :- দুঃখ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় ধর্ম। ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তাবোধ ও স্বাভাবিক সমাজ জীবন সুনিশ্চিত করে ধর্ম।

10. চরিত্র গঠন :- ধর্মকে আশ্রয় করে ব্যক্তির চরিত্র গঠন হয়। ন্যায়-নিষ্ঠা, সামাজিক মূল্যবোধ ও আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে ধর্ম চরিত্র গঠনে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানের অবদান এর সাথে সাথে নানা কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাস বিদায় নিয়েছে। তাই কেউ কেউ বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরোধী বলে প্রচার করেছেন। বিজ্ঞানের যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে রয়েছে এই ধর্মবোধ। সমাজ জীবনের জটিল আবর্তে দিশেহারা মানুষকে শান্তি এনে দেয় ধর্ম। সুস্থ সমাজ জীবন ধর্ম ছাড়া অসম্ভব, তাই নানা ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপ এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ধর্ম ও সংস্কৃতির যতই বিরোধী মনোভাব থাকুক না কেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে এই দুইয়ের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য কারণ ধর্ম ও সংস্কৃতি শিক্ষাকে একটি অন্যমাত্রায় রুপ লাভ করতে সাহায্য করেছে।

আরো পড়ুন

শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর অবদান | Contribution of Srirampur Trio in Education

শিক্ষণ কি | শিক্ষনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য | What is Teaching | Nature and Characteristics of Teaching

শিখন ও পরিনমনের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক কি | Difference and Relation between Learning and Maturation in Bengali

শিখনের গেস্টাল্ট তত্ব | শিক্ষাক্ষেত্রে গেস্টাল্ট তত্বের প্রয়ােগ | Gestalt Theory of Learning in Bengali

গঠনবাদ | শিখনের গঠনবাদ তত্ত্ব | ভিগটস্কির শিখন মতবাদ | Constructivism in Bengali

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের বা মুদালিয়ার কমিশনের ত্রুটি গুলি কি কি

লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি | Lord Curzon-Educational Policy in Bengali

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু | ব্যতিক্রমধর্মী শিশুর সংজ্ঞা ও শ্রেণিকরণ | বিশেষ শিক্ষা | Special Education in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!