বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Vedic Education System

বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Vedic Education System

উত্তর:

বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে যুগ। বৈদিক শিক্ষা ছিল প্রাচীন ভারতের প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা। 

বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থা
বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থা

1) শিক্ষার লক্ষ্য : প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল । আর্য ঋষিরা উপলব্ধি করেছিলেন যে পরমাত্মা অবিনশ্বর হলেও জীবাত্মা নশ্বর। প্রাচীনকালে শিক্ষা ধর্মের সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। আর্য ঋষিরা মনে করতেন আত্মজ্ঞান ও আত্মউপলব্ধি হচ্ছে শিক্ষার চরম লক্ষ্য। সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষ্য সাধনে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা কেবলমাত্র শিক্ষাই জোগাতে পারে। তাই তারা বলেছেন

“সা বিদ্যা যা বিমুক্তেয়”।

2) শিক্ষারম্ভ : বৈদিক যুগে পাঁচ বছর বয়সে ‘চৌলকর্ম’ বা ‘চূড়াকরণ” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হত। এই অনুষ্ঠানের পর শিশু গৃহ পরিবেশে তার পিতার তত্ত্বাবধানে বেদ শিক্ষা গ্রহণ করত। এই শিক্ষার কাল বিভিন্ন বর্ণের শিশুদের জন্য বিভিন্ন ছিল। ব্রাহ্মণ সন্তানরা ৮ বছর, ক্ষত্রিয়রা ১১ বছর ও বৈশ্যরা ১২ বছর বয়স পর্যন্ত পিতার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করত। শূদ্রদের বেদ শিক্ষার অধিকার ছিল না।

পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষার সম্পূর্ণ করার পর, উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য গুরুর গৃহে গমন করত।

• বর্ণভেদে উপনয়নের সময় আলাদা ছিল। ব্রাহ্মণ সন্তানদের ৮ বছর, ক্ষত্রিয়দের ১১ বছর এবং বৈশ্যদের ১২ বছর বয়সে উপনয়ন হত।

গুরুর গৃহে থেকেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হত।  গুরু শিক্ষার্থীদের নানাভাবে পরীক্ষা করতেন, উপযুক্ত বিবেচিত হলে তবেই গুরুতাকে শিক্ষা দিতেন।

3) পাঠক্রম : বৈদিক শিক্ষার পাঠক্রম ব্যাপক ছিল না। পরে পাঠক্রমের মধ্যে নানাবিধ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্ণভেদে শিক্ষা তারতম্য ছিল। বিভিন্ন বর্ণের উপযোগী বৃত্তি শিক্ষা পাঠক্রমে স্থান পায়। পাঠক্রমের মধ্যে ছিল চারটি বেদ, ছটি বেদাঙ্গ ও উপনিষদ। ব্রাহ্মণদের আচরণবিধি পালনের জন্য সূত্র ও দার্শনিক জ্ঞানের জন্য বেদান্তও পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইতিহাস, পুরান, ব্যাকরণ, অস্ত্রবিদ্যা, রাশিবিজ্ঞান, ভূবিদ্যা, সর্পবিদ্যা, নক্ষত্র বিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, ব্রহ্মবিদ্যা, তর্ক স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়।

4) শিক্ষণ পদ্ধতি : বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল মৌখিক। গুরু কখনো ব্যক্তিগতভাবে আবার কখনো সমষ্টিগতভাবে শিক্ষা দিতেন। শিক্ষাদান শুরু হত শ্রাবণ পূর্ণিমা দিন। অমাবস্যা, পূর্ণিমা, ঝড়-বৃষ্টি, বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠান প্রভৃতি কারণে শিক্ষাদান বন্ধ থাকত।

• গুরু শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে শাস্তি দানের ব্যবস্থা ছিল। শ্রবণ- মনন- নিদিধ্যাসনের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হত। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা যুক্তি নির্ভর হওয়ায় শিক্ষায় প্রশ্ন উত্তর পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। শিক্ষায় পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় বিতর্ক ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পরীক্ষা করা হত। সমাবর্তন উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পূর্ণ হত। সমাবর্তন উৎসবে গুরু শিক্ষার্থীকে কতগুলি মূল্যবান উপদেশ দিতেন, সেই উপদেশ গুলি সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থী বৃহত্তর জীবনের কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করত।

5) গুরু শিষ্যের সম্পর্ক: বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরু ও শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। শিক্ষার্থীরা গুরুকে পিতার মত সম্মান দিতেন এবং গুরু শিক্ষার্থীদের পুত্র হিসেবে দেখতেন। আচার্য ছিল ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি। পক্ষপাত শুন্য, সমদৃষ্টি সম্পূর্ণ।  সমস্ত বিদ্যার শিক্ষাদান করতেন। ত্যাগ চরিত্র, জ্ঞান ও ধর্মের ঐকান্তিকতার জন্য সমাজে আচার্য সর্বাধিক পূজ্য ছিলেন। শিষ্য গুরুর গৃহে পরিবারের একজন হিসেবে বসবাস করত। গুরুই তার আহারের ব্যবস্থা করত।

আরো পড়ুন

বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো | Buddhist Education System in Bengali

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর | Brahmanical System of Education in Bengali

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission) | স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ

শিক্ষার পরিধি গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment

error: Content is protected !!