এ্যাডামস রিপোর্ট | Adam’s Report (1835-1838)

এ্যাডামস রিপোর্ট | Adam’s Report (1835-1838)

উত্তর:

এ্যাডামস রিপোর্ট (Adam’s Report – 1835)

উইলিয়াম এ্যাডামস 1835-1838 সালে মধ্যে তৎকালীন বাংলা ও বিহারের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে বেসরকারিভাবে তিনটি রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টই এ্যাডামস রিপোর্ট নামে পরিচিত।

তার রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ হলেও অনেকাংশে নির্ভরযোগ্য ছিল।

এ্যাডামস রিপোর্ট
William Adam

এই রিপোর্ট থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটি চিত্র পাওয়া যায়।

এ্যাডামসের মতে, “উচ্চতর হতে নিম্নতর সব রকমের দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় জনগণের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র উন্নয়নের সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন। জনমনে সে চেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ, জনপ্রিয় ও ফলপ্রসু প্রকল্প।

এ্যাডামসের প্রথম রিপোর্ট :

1835 সালের 1 জুলাই এ্যাডামস তার প্রথম রিপোর্ট পেশ করেন। তার রিপোর্টে বলা হয় বাংলা ও বিহারের লোক সংখ্যা ছিল 4 কোটি। বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 1 লক্ষ্য। এই হিসেবে প্রতি 400 জনের জন্য একটি করে বিদ্যালয় ছিল। গ্রামের সংখ্যা ছিল 1,50,748 টি । এই হিসেবে প্রতি 3 গ্রামে ২টি করে বিদ্যালয় ছিল।

এ্যাডামসের রিপোর্টে উল্লেখিত বিদ্যালয়ে সংখ্যা নিয়ে স্যার ফিলিপ হার্টগ উপহাস করেন। আবার অনেকে সঠিক বলে মনে করেন। এ্যাডামস অবশ্য বিদ্যালয় সম্পর্কে আধুনিক ধারণা অনুযায়ী এই সংখ্যা করেননি। কারণ তখনকার দিনে কোন কোন পরিবারের এক বা একাধিক ছেলেমেয়ে পারিবারিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করত। এগুলোকে পারিবারিক বিদ্যালয় বলে গণ্য করা হত। এদিক থেকে বিচার করলে বাংলা ও বিহারে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 1 লক্ষ 25 হাজার। ইতিপূর্বে ম্যাক্সমুলার, ওয়ার্ড, ম্যালিকম প্রভৃতি মনীষীদের বিবরণীর ভিত্তিতে ভারতে ওই একই পরিমাণ বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে। ফলে এ্যাডামসের উক্তির যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে।

এ্যাডামসের দ্বিতীয় রিপোর্ট:

এ্যাডামস 1835 সালের 23শে ডিসেম্বর তার দ্বিতীয় রিপোর্ট পেশ করেন। এই বিবরণীতে তিনি রাজশাহী জেলার নাটোর থানার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে অভ্যন্ত বিস্তৃতভাবে অনুসন্ধান করে তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করে উপস্থাপিত করেন। নাটোরের লোক সংখ্যা ছিল 195,296 জন। তার মধ্যে 1,29,680 জন ছিল মুসলমান ও 65,656 জন ছিল হিন্দু। গ্রামের সংখ্যা ছিল 485 টি। এখানে 27 টি বিদ্যালয়ে 262 জন শিক্ষার্থী ছিল।

এরমধ্যে বাংলা স্কুল ছিল 10 টি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল 167 জন।

ফরাসি স্কুল ছিল 4 টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল 23 জন। আরবি স্কুল ছিল 11 টি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল 42 জন। বাংলা ও ফরাসি স্কুল ছিল 2টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩০ জন। মোট 27 টি স্কুলে 262 জন শিক্ষার্থী ছিল।

নাটোরে 38টি সংস্কৃত ভাষার উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। ছাত্র সংখ্যা ছিল 397 জন। তার মধ্যে 136 জন শিক্ষার্থী ছিল ওইসব গ্রামের, তারা বিনা বেতনে শিক্ষা লাভ করত। বাকি 261 জন অন্যান্য গ্রাম থেকে আসত। দূরবর্তী গ্রাম থেকে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য আসত তাদের বিনা খরচায় থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

নারী শিক্ষার তেমন কোন প্রচলন ছিল না।

→ অ্যাডমসের রিপোর্ট অনুযায়ী নাটোর থানার সমগ্র পুরুষ জনসংখ্যার আনুপাতিক শিক্ষার হার ছিল 6.1 শতাংশ, নারী ও পুরুষ মিলিয়ে সাক্ষরতার হার ছিল 3.1 শতাংশ।

→ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার গড় বয়স ছিল ৪ বছর ও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হত 14 বছর বয়সে। উচ্চশিক্ষা শুরু হত সাধারণত 11 বছর বয়সে ও শেষ হত 27 বছর বয়সে।

এ্যাডামসের তৃতীয় রিপোর্ট :

1838 সালের 28 শে এপ্রিল তার তৃতীয় রিপোর্ট পেশ করেন।

এই বিবরণীটি দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। প্রথম অংশে বাংলা ও বিহারের পাঁচটি জেলার (মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, দক্ষিণ বিহার ও ত্রিহুত )

দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটি পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেন।

দ্বিতীয় অংশে এ্যাডামস দেশীয় বিদ্যালয়গুলি সংস্কার সাধনের প্রস্তাব করেন।

এ্যাডামস এই পাঁচটি জেলায় আট রকমের মোট 2567 টি বিদ্যালয় খুঁজে পান। তার মধ্যে বাংলা বিদ্যালয় ছিল 1099 টি হিন্দি বিদ্যালয় ছিল 376টি, সংস্কৃত বিদ্যালয় ছিল ওটি, ফরাসি বিদ্যালয় ছিল 694টি, আনুষ্ঠানিক আরবি ও আরবি বিদ্যালয় ছিল 38টি, ইংরেজি বিদ্যালয় 4টি ও বালিকা বিদ্যালয় ছিল 6টি।

→ এই পাঁচটি জেলার মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 113 টি। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল 1396 জন, তার মধ্যে ছাত্রী ছিল 28 জন। বীরভূমে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 544 টি। মোট শিক্ষার্থী ছিল 7350 জন, তার মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ছিল 11 জন। বর্ধমান বিদ্যালয় সংখ্যা ছিল 931 টি। মোট শিক্ষার্থী ছিল 15,814 জন, ছাত্রীর সংখ্যা ছিল 175 জন। দক্ষিণ বিহার মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 605টি মোট শিক্ষার্থী ছিল 5306 জন, ত্রিহুত মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল 374 টি। মোট শিক্ষার্থী ছিল 1319 জন।

• এই পাঁচটি জেলায় মোট শিক্ষিতের হার ছিল 6.1 শতাংশ।

• এক বা একাধিক জেলাকে নির্বাচিত করে পরীক্ষামূলক ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। • পরিকল্পিতভাবে নির্বাচিত জেলা গুলোর শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

• শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ব্যবহারের জন্য আধুনিক ভারতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে।

• প্রতি জেলায় শিক্ষা পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে রূপায়ণের জন্য একজন পরীক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

• শিক্ষকদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে তাদের অধ্যায়নের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

• এ্যাডামস শিক্ষনের মান উন্নয়নের জন্য নরমাল স্কুলে প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। এখানে শিক্ষকরা তাদের যোগ্যতার মান উন্নয়ন করতে পারবেন।

• শিক্ষক যাতে তার নবলব্ধ জ্ঞান ছাত্রদের প্রদান করেন এর জন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে। শিক্ষক ছাত্রদের পরীক্ষা গ্রহণ করে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করবেন।

আরো পড়ুন

ডেলরস কমিশন কী | Delors Commission (1996)

বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো | Buddhist Education System in Bengali

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর | Brahmanical System of Education in Bengali

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission) | স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ

শিক্ষার পরিধি গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment

error: Content is protected !!