Q: সর্বশিক্ষা অভিযান | সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য | Sarba Siksha Abhijan
Q: সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য
Q: সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য
Q: সর্বশিক্ষা অভিযান এর বৈশিষ্ট্য
Q: সর্বশিক্ষা অভিযানের সমস্যা ও সমাধান গুলি আলোচনা করো
উত্তর:
সর্বশিক্ষা অভিযান
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের সমস্ত মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিটি কমিশন ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৪৫ নম্বর ধারায় ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুদের জন্য অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের এই ধারাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাকে সর্বজনীন করা সম্ভব হয়নি।
কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষামুখী সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ বছরের মধ্যে, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করে তাই সর্বশিক্ষা অভিযান নামে পরিচিত।
সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য:
সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্যগুলি হল—
(১) ১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদান করা।
(২) স্কুলের অভাবে কিংবা ড্রপআউটের কারণে যেসব পড়ুয়া স্কুলের বাইরে রয়েছে তাদের শিক্ষাকেন্দ্রের আওতায় আনা।
(৩) যে সকল ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন কারণে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে তাদেরকে পুনরায় বিদ্যালয়ে এনে শিক্ষাদান।
(৪) ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সমস্ত ছাত্রের একজনও যাতে বিদ্যালয় ছেড়ে না যায় তা সুনিশ্চিত করা।
(৫) শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য সহ নানাবিধ সামাজিক ব্যবধান নিরসন করে সমস্ত শিশু আট বছরের বিদ্যালয় শিক্ষা সুনিশ্চিত করা।
সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য:
(১) ২০০৩ সালের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুদের পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য নিশ্চিতকরণ কেন্দ্র (Education Guarantee Centre), পরিবর্ত বিদ্যালয় (Alternative Schools), এবং বিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন ক্যাম্প (Back to School Camps) স্থাপন করা।
2) ২০০৬ সালের মধ্যে সকল শিশুর চার বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা।
৩) ২০১০ সালের মধ্যে সকল শিশু যাতে ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
৪) ২০১০ সালের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়সের সকল শিক্ষার্থী, যারা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল, তাদের ধরে রাখার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫) প্রারম্ভিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে জীবনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
৬) ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য-সহ নানাবিধ সামাজিক ব্যবধান দূর করা।
৭) প্রারম্ভিক ও প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে অবশ্যই গুণগত মান বজায় রাখতে হবে।
৮) যে সকল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে তাদের একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৯) ছেলেমেয়েদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটানো এবং সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।
সর্বশিক্ষা অভিযানের বৈশিষ্ট্য :
সর্বশিক্ষা অভিযান বা মিশনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(১) সারাদেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার মানের উন্নতি সাধন করা।
(২) শিক্ষা যাতে শিশুর জীবনে কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
(৩) সর্বশিক্ষা অভিযান বা মিশনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলবার জন্য কেন্দ্রীয় স্তর থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা।
(৪) সরকারী উদ্যোগের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সমাজ সেবার মনোভাবকে উৎসাহিত করবার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
(৫) বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি যাতে স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যকে বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মসূচির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে সে বিষয়ে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সমস্যা :
সর্বশিক্ষা অভিযান বা মিশনের সমস্যাগুলি হল—
প্রথমত, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অথবা পরিকল্পনার অভাবে বহুক্ষেত্রে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্যয় হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় হয়।
দ্বিতীয়ত, সঠিক নেতৃত্বের অভাবে প্রকল্পটি রূপায়নের কাজে সমাজের সকল শিক্ষিত ও অশিক্ষিত জনসাধারণকে সামিল করা সম্ভব হয়নি।
তৃতীয়ত, দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ের খুব অল্প বয়স থেকে পাকাপাকি কাজকর্মে বাবা মাকে সাহায্য করতে হয়, ফলে তারা বিদ্যালয়ে আসতে পারে না।
চতুর্থত, স্কুলে না আসা ছেলেমেয়ে যাদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসার জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি, তাদের জন্য স্কুল কোথায়? বসবে কোথায়? শিক্ষক কোথায়?
সমস্যার সমাধান :
সমস্যাগুলি সমাধানের উপায়সমূহ –
প্রথমত, সকল ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিদ্যালয়ে শিশুদের না আসার কারণ দূর করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তৃতীয়ত, অনুন্নত অঞ্চলের অধিবাসীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
চতুর্থত, বরাদ্দ অর্থ যাতে অপব্যবহার না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার:
সুতরাং, সর্বশিক্ষা অভিযানকে সফল করতে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের সার্থক রুপায়নের জন্য একদিকে যেমন রাজ্য সরকারগুলিকে এই প্রকল্পে সামিল করেছেন, অন্যদিকে তেমনই বিভিন্ন জেলা পরিষদ, গ্রাম পঞ্চায়েত, বেসরকারি সংস্থা, ক্লাব, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরাও যাতে এই প্রকল্প রূপায়নে সামিল হয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কার্যক্রম অনুযায়ী সেসব গ্রামে শিক্ষার সুবিধা উপলব্ধ নেই সেখানে নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। যেখানে পুরনো বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, টয়লেটও পানীয় জলের জন্য অনুদান প্রদান। যে সকল বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই তার জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক প্রদান করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান। সর্বশিক্ষা অভিযান, জীবন দক্ষতা সহ উঁচুমানের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে। সর্বশিক্ষা অভিযান দ্বারা মেয়েদের এবং যেসব শিশুরা বিশেষভাবে অক্ষম তাদের উপর বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ডিজিটাল পার্থক্য দূরকরতে অভিযানের আওতায় কম্পিউটার শিক্ষাদানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের উপস্থিতি যাতে না কমে এর জন্য মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Frequently Asked Questions :
Q: সর্বশিক্ষা অভিযান কার্যকরী হয় কত সালে?
Ans: ২০০০ সালে।
Q: সর্বশিক্ষা অভিযান কবে চালু হয়?
Ans: ২০০০ সালে।
Q: সর্বশিক্ষা অভিযান এর বর্তমান নাম কি?
Ans: সমগ্র শিক্ষা অভিযান।
আরো পড়ুন
শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ | Right to Education (RTE) Act 2009 in Bengali
ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার | Fundamental Rights of Indian Constitution
শিক্ষার অর্থ ও সংজ্ঞা | শিক্ষার প্রকৃতি | Meaning and Nature of Education
শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য | Concept and Characteristics of Educational Technology