অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা অপ্রথাগত শিক্ষা | Informal Education In Bengali
উত্তর:
শিক্ষার বিভিন্ন রূপ
আদিম যুগ থেকে শিক্ষার প্রযােজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্থা বা মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার বিভিন্ন ধরনের বিকাশের জন্য জ্ঞানের গুণগত পরিবর্তন ঘটে। শিক্ষাবিদরা এই পরিবর্তন অনু্যায়ী শিক্ষার তিনটি রূপের কথা বলেছেন যথা – অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা, নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ও প্রথামুক্ত বা নিয়মবহির্ভূত শিক্ষা
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা
যে শিক্ষা শিক্ষার উপাদান (শিক্ষক, শিক্ষার্থী পাঠক্রম ও বিদ্যালয়) গুলির কোনো প্রাধান্য থাকে না, কোন পূর্বনির্ধারিত পাঠক্রম অনুসরণ করা হয় না, যেকোনাে বয়সের মানুষ যেকোনাে সময় এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং যে শিক্ষা রাষ্ট্র বা সমাজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা :
জে.পি নায়েক বলেছেন – সমাজ জীবনের অঙ্গ হিসেবে একজন ব্যক্তি যা কিছু শেখে তাই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য :
a) নিয়ন্ত্রনহীন শিক্ষা – অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার উপাদান গুলির কোন প্রাধান্য থাকে না। শিক্ষার্থীর প্রাধান্য থাকলেও অন্য তিনটি উপাদানের সে রকম কোন প্রাধান্য থাকে না। শিক্ষার্থী তার চাহিদা অনুযায়ী শেখে।
b) নির্দিষ্ট পাঠক্রম থাকেনা – এই শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোন পাঠক্রম থাকেনা। এই ধরনের শিক্ষা শিক্ষার্থীর চাহিদার ওপর নির্ভরশীল এবং যে কোনাে বয়সের মানুষ এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তাই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কোন পূর্বনির্ধারিত পাঠক্রমের প্রয়ােজন হয় না।
c) শিক্ষক নির্ভর নয় – এই শিক্ষায় শিক্ষকের কোনাে প্রাধান্য থাকে না | শিক্ষার্থীরা তার পরিবার, পিতা-মাতা, অভিভাবক, পরিবেশ, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ইত্যাদি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। তাই এখানে শিক্ষকের কোন ভূমিকা নেই।
d) শিক্ষার নির্দিষ্ট স্তর ও বয়স থাকে না – অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোনাে শিক্ষাস্তর না থাকার কারণে নির্দিষ্ট কোন বয়সের বাধ্যবাধকতা থাকে না। এখানে শিক্ষার্থী তার চাহিদা অনুযায়ী যেকোনাে বয়সে যেকোনাে সময় যেকোনাে ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
e) পর্যবেক্ষণ অনুশীলন ও অনুকরণ ভিত্তিক শিক্ষা – এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী পরিবার, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সমাজ এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এবং তা অনুশীলন করে শেখে। আবার অনেক সময় বড়দের কোন কাজ করতে দেখলে ছােটরা তা অনুকরণ করে।
f) চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় – অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে নির্দিষ্ট কোন শিক্ষালয় থাকে না। তাই এই শিক্ষা চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর সমাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
g) নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি থাকে না –
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে নির্দিষ্ট কোন শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। এখানে শিক্ষার্থী তার চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শেখে।
h) মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেই – অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোনাে মূল্যায়ন এর ব্যবস্থা থাকে না, কারণ এই শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোন পাঠক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে অর্জিত জ্ঞানের মূল্যায়ন করে থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা :
1) অভিজ্ঞতার অসম্পূর্ণতা – সমাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা উপযুক্ত নয়, কারণ এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করতে পারেনা। আধুনিক যুগে সুষ্ঠু ভাবে জীবন যাপন করতে হলে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা বিশেষভাবে জরুরি।
b) মানসিক বিকাশে সহায়ক নয় – শিক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এই শিক্ষায় কেবলমাত্র অনুকরণ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। তাই এই শিক্ষা শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে না।
c) চাহিদা পূরণে ব্যর্থ – শিক্ষা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীর চাহিদার প্রসার ঘটছে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন নতুন চাহিদাগুলি পরিতৃপ্ত করতে সক্ষম নয় যার ফলে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
d) পারদর্শিতা অর্জন অক্ষম – আধুনিককালে সাধারন জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা সাহায্য করলেও কোন বিশেষ বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে সক্ষম নয়।
e) সামাজিক পরিবর্তনে সহায়ক নয় – বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের সামাজিক চাহিদা পূরণ করে আসছে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা। কিন্তু আধুনিক যুগে পরিবর্তনশীল সমাজের কৌশলগুলি অর্জন করার জন্য অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। কারণ সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর এই শিক্ষার কোনাে নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই এই শিক্ষা যেমন সরাসরিভাবে সমাজের অগ্রগতি কে সাহায্য করতে পারে না। তেমনি সামাজিক পরিবর্তনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে না।
বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম গুলি হল – পরিবার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, গণমাধ্যম, অর্থনৈতিক ও উৎপাদন সংক্রান্ত সংস্থা, ক্লাব ইত্যাদি।
আরো পড়ুন
প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে | প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব | Classical Conditioning
মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ | Mudaliar Commission (1952-53) in Bengali
রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন | Radhakrishnan commission (1948-49) in Bengali
কোঠারি কমিশন (1964-66) | Indian Education Commission in Bengali