প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে | প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব | Classical Conditioning

প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে | প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব | Classical Conditioning

উত্তর:

প্রাচীন অনুবর্তন বা আপাত অনুবর্তন (Classical Conditioning)

যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়াকে তার স্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিবর্তে অন্য উদ্দীপকের সঙ্গে যুক্ত করা হয় তাকে প্রাচীন অনুবর্তন বলে। এক্ষেত্রে শক্তিদায়ক উদ্দীপক এর কোন ভূমিকা থাকে না। 

প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ব (Classical Conditioning Theory of Ivan Pavlov) 

প্রাচীন অনুবর্তন তত্বের প্রবক্তা হলেন আইভান প্যাভলভ। তিনি ছিলেন রাশিয়ার শারীর তত্ববিদ। প্যাভলভ প্রাচীন অনুবর্তন তত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তার মধ্যে তার কুকুরের লালাক্ষরণ পরীক্ষাটি উল্লেখযােগ্য। প্যাভলভের মতে প্রাণী তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাহ্যিক উদ্দীপনা সংগ্রহ করে এবং বাইরের জগত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। তার মতে, প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে যখন কোনাে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু উদ্দীপক থাকে এবং যেকোন অবস্থাতেই উদ্দীপক গুলি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্যাভলভ এই উদ্দীপক গুলিকে স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়া গুলিকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সংযােগ পূর্বনির্ধারিত। এজন্য কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। আবার যদি কোন স্বাভাবিক উদ্দীপকের সঙ্গে কৃত্তিম উদ্দীপকে বারবার উপস্থাপন করা হয় তবে স্বাভাবিক উদ্দীপকটি কৃত্তিম উদ্দীপকের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং স্বাভাবিক উদ্দীপক যে প্রতিক্রিয়া ঘটাবে কৃত্তিম উদ্দীপক ও সেই একই প্রতিক্রিয়া ঘটাবে। একেই প্যাভলভীয় অনুবর্তন বা সাপেক্ষীকরণ বলে।

প্যাভলভের পরীক্ষা : 

প্রাচীন অনুবর্তন
প্যাভলভের পরীক্ষা

প্যাভলভ তার পরীক্ষার জন্য একটি ক্ষুধার্ত কুকুর নিয়েছিলেন। কুকুরটির সামনে কিছু খাওয়া দাওয়া হল, দেখা গেল কুকুরটির লালা ক্ষরণ হচ্ছে। লালাক্ষরণের কারণ হল চোখের সামনে খাদ্যবস্তু দেখা। এটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। প্যাভলভ কুকুরটির লালাক্ষরণের পরিমাপের ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর প্রতিদিন পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে কুকুরটির সামনে খাওয়া দেওয়ার আগে খাওযার সম্পর্কে কুকুরটিকে সচেতন করার জন্য একটি ঘন্টার ধ্বনি শােনানাে হয়| ঘন্টার ধ্বনি শেষ হওয়ার আগেই কুকুরটির সামনে খাদ্যবস্তু দেওযা হয়। কিছুদিন এইভাবে পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি করার পর দেখা গেল কুকুরটির ঘণ্টাধ্বনি শােনামাত্রই লালা ক্ষরণ শুরু হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ঘন্টার শব্দের সঙ্গে লালা ক্ষরণ এর কোন সম্পর্ক নেই। ঘণ্টাধ্বনির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হল সজাগ ভাব। তাই প্রথম ঘণ্টাধ্বনি শােনামাত্র কুকুরটির মধ্যে সজাগ ভাব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষাটি বারবার পুনরাবৃত্তি করার ফলে ঘন্টাধ্বনি উদ্দীপকের সঙ্গে লালাক্ষরণ যুক্ত হল। ঘণ্টাধ্বনি উদ্দীপক হিসেবে লালাক্ষরণের প্রতিক্রিয়া ঘটাল। খাদ্যবস্তু যখন লালাক্ষরণ ঘটায় তখন তা হল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু যখন ঘন্টাধ্বনি লালাক্ষরণ ঘটায় তখন লালাক্ষরণ হল অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া এবং ঘন্টাধ্বনি হল অনুবর্তিত উদ্দীপক। প্যাভলভ একেই অনুবর্তিত আবর্তক্রিয়া বলেন। বর্তমানে একে অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া বলে।

আরো পড়ুন

মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ | Mudaliar Commission (1952-53) in Bengali

বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য | জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তর | Difference between Growth and Development

রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন | Radhakrishnan commission (1948-49) in Bengali

কোঠারি কমিশন (1964-66) | Indian Education Commission in Bengali

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | Kothari Commission (1964-66) in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!