অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কী | অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা | Inclusive Education in Bengali
অথবা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি ও লক্ষ্য গুলি কী ?
উত্তর:
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে মৃদুমাত্রায় প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে, স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুসারে শিখনের সুযোগ করে দেওয়া।
অর্থাৎ, সমাজের সব ধরনের শিক্ষার্থীর কথা মাথায় রেখে যে শিক্ষার আয়োজন করা হয় তাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যারা পৃথক তারাও স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে একই সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি (Principles of Inclusive Education) :
অন্তর্ভুক্তি মূলক শিক্ষার প্রধান তিনটি নীতি রয়েছে –
i) সমাজের সমস্ত নাগরিকদের শিক্ষা গ্রহণের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করা।
ii) প্রত্যেক শিশু পৃথক পৃথক সত্তাযুক্ত। তাই প্রত্যেকের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
iii) কোনরকম শাস্তি বা ভয় প্রদর্শন না করে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of inclusive education) :
1) শিক্ষায় সমান সুযোগ দান করা।
2) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল একই ভবন এবং স্বাভাবিকীকরণ।
3) শিক্ষার মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিখনের পারদর্শিতা ঘটিয়ে শিখনের বাধা দূর করা।
4) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা এবং তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়তা করা।
5) সাধারণ শিশুদের যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় যে ধরনের শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের সুযোগ আছে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরও সেই একই রকম সুযোগ দেওয়া।
6) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও সাধারণ শিশুদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিষেবা :
1) শিক্ষাদানের বিষয়গুলি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।
2) প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশদান কৌশলের পরিকল্পনা করা।
3) শিশুদের পঠনপাঠান সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া।
4) উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যবস্থা পরিচালনা করা।
5) পাঠক্রমের কার্যক্রমের পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা করা।
6) অভিভাবক ও অভিভাবিকা দের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা।
7) শিক্ষণ সহায়ক উপকরণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা।
৪) মৃদুমাত্রায় প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিক যত্নসহকারে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
9) সহপাঠী প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিকতা উন্নত করা এবং সযোগিতামূলক মনোভাব গঠনের উপায় নির্ধারণ করা।
10) শিক্ষাগত চাহিদা পূরণের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিখন প্রক্রিয়া প্রভৃতি উন্নত করতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়োজিত করা।
11) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সমবন্টনের মাধ্যমে ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্রমে সামাজিক দূরত্ব কমিয়ে আনা।
12) প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সাবলম্বী করে গড়ে তোলা।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা :
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর। সেগুলি হল –
1) বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি অথবা কোন বিশেষ সমস্যা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কোন উপাদানের প্রয়োজন হলে শিক্ষকের দায়িত্ব হল বিদ্যালয়ের প্রশাসনকে জানানো।
2) বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অভিভাবকদের ধারণা দেওয়া শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
3) বাস্তব প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কখনো শিক্ষককে তার নির্দিষ্ট পাঠক্রমের মধ্যে কিছু কিছু সংযোজন, বিয়োজন করতে হয় এক্ষেত্রে শিক্ষকের নমনীয়তা, বিচার-বিবেচনা বোধ, বাস্তবতা বোধ বিশেষ প্রয়োজন।
4) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণীকক্ষে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পায়, স্বাভাবিক শিশুরা যাতে তাদের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ না করে এবং সর্বোপরি শিক্ষাক্ষেত্রে যাতে শিখন সহায়ক পরিবেশ বজায় থাকে সেদিকে শিক্ষককে নজর রাখতে হবে।
5) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষককে কর্মরত অবস্থায় মাঝে মাঝে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুন
প্রকৃতিবাদ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃতিবাদী দর্শনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
সনদ আইন (1813) | সনদ আইনের উদ্দেশ্য | সনদ আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো | Nature of Educational Psychology in Bengali