Q: শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু কাদের বলে | শ্রেণীবিভাগ ও শনাক্তকরণ | Concept of Hearing Impairment Children in Bengali
Q: শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুর বৈশিষ্ট্য
Q: শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি
উত্তর:
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু (Hearing Impairment Children)
কোন ব্যক্তি যদি 25 ডেসিবেল তীব্রতাযুক্ত শব্দ শুনতে পায় তাহলে তাকে স্বাভাবিক শ্রবণযুক্ত ব্যক্তি বলা হয়। আবার কোন ব্যক্তির শব্দ শোনার জন্য যদি 25 ডেসিবেলের অধিক তীব্রতাযুক্ত শব্দের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে শ্রবণের দিক থেকে ত্রুটি সম্পন্ন বলা হয়।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুর সংজ্ঞা (Definition of Hearing Impairment Children) :
শ্রবণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
i) বধির (Deal) : জন্ম থেকে যে সমস্ত শিশুরা শ্রবণে অক্ষম অর্থাৎ, যাদের শ্রবণ ইন্দ্রীয়ের কোন কার্যকারিতা থাকে না তাদের বধির বলা হয়।
ii) কানে থাটো (Hard of Hearing) : যে সমস্ত শিশুরা নির্দিষ্ট উচ্চমাত্রার শব্দ সরাসরি শুনতে পায় অথবা শ্রবণ যন্ত্রের সাহায্যে শুনতে পায়। সেই সমস্ত শ্রাবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের কানে খাটো বলা হয়।
আমেরিকার “Individuals with disability act (1990)- বধির ও কানে খাটো শিশুদের এই দুটি ভাগের পৃথক সংজ্ঞা দিয়েছেন।
বধির : “Deafness means a hearing impairment that is so severe that the child is impaired in processing linguistic information through hearing, with or without amplification, that adversely affects a child’s educational performance.”
কানে খাটো : “Hard of hearing means an impairment in hearing, whether permanent or fluctuating that adversely affects a child’s educational performance but that is not included under the definition of deafness”.
আমেরিকার “School for the Deaf” এর কর্তা ব্যক্তিদের মতে, সেই ব্যক্তিকে বধির বলা যায়, যার শ্রবণ ক্ষমতা এতটাই কম যে শ্রবণ যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে বা সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র কানের সাহায্যে তিনি অন্যের কথা শুনতে অক্ষম।
আবার যাদের শ্রবণ ক্ষমতা এতটাই কম যে, শ্রবণ সহায় যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে বা সাহায্য ছাড়াই কেবলমাত্র কানের সাহায্যে তিনি অন্যের কথা খুব কষ্টে শুনতে সক্ষম, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কানে খাটো বলা হয়।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Hearing Impairment Children) :
শব্দের মাত্রা অনুযায়ী শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে সেগুলি হল-
i) অতি সামান্য মাত্রা : এই সমস্ত শিশুরা 26 dB – 40 dB পর্যন্ত প্রাবল্যের শব্দ শুনতে পায় না। অর্থাৎ, ক্ষীন বা ফিসফিস শব্দ শুনতে এদের অসুবিধা হয়।
ii) মৃদু মাত্রা : যে সমস্ত শিশু 55 dB পর্যন্ত প্রাবল্যের শব্দ শুনতে পায় না তাদের মৃদু মাত্রায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলা হয়। এদের বিশেষ বিদ্যালয় বা বিশেষ ক্লাসে যাওয়া দরকার নেই। এরা তিন থেকে পাঁচ ফুট দূর থেকে সাধারণ কথা শুনতে পায় ও বাক্যালাপ করতে পারে |
iii) মধ্যম মাত্রা : যে সমস্ত শিশু 56 dB – 70 dB পর্যন্ত প্রাবল্যের শব্দ শুনতে পায় না, তারা এই স্তরের অন্তর্গত। এরা 70 dB উপর প্রাবল্যের শব্দ শুনতে পায়। এই স্তরের শিশুদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয় বা বিশেষ শ্রেণীর প্রয়োজন। সাধারণ বাক্যালাপের ক্ষেত্রে এদের অসুবিধা হয়। নিয়মিত বিশেষ ধরনের বাক, শ্রুতি ও ভাষা সহায়তা দানের প্রয়োজন হয়। এই ধরনের শিশুরা নিজেদের মধ্যে বিশেষ কিছু নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে। সাধারণ শ্রেণীতে এরা অসুবিধা বোধ করে। এদের শিক্ষার জন্য বিশেষ শিক্ষকের প্রয়োজন।
iv) গুরুতর মাত্রা : যে সমস্ত শিশুরা 71 dB – 90 dB পর্যন্ত প্রাবল্যের শব্দ শুনতে অক্ষম তারা এই স্তরের অন্তর্গত। এই সমস্ত শিশুরা এক ফুট দূর থেকে প্রচন্ড চিৎকার, জোরে কথা বলা শুনতে পারে। এরা পরিবেশের কিছু কিছু শব্দকে চিহ্নিত করতে পারে। তবে এরা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা। এদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয় বা বিশেষ শ্রেণিকক্ষে শ্রুতি ও ভাষা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
v) চূড়ান্ত মাত্রা : যে সমস্ত শিশু 91dB বা তার অধিক প্রাবল্যের শব্দ শুনতে অক্ষম তারা এই স্তরের অন্তর্গত। এই শিশুরা খুব সামান্য শব্দ শুনতে পায়। কিক্ত তা লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। তাই বিশেষ বিদ্যালয় এবং বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এদের শিক্ষা দিতে হয়।
vi) বধির : যে সমস্ত শিশু শ্রবণ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছে তাদের বধির বলা হয়। এই সমস্ত শিশুদের শ্রবণ মূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এরা শুনতে পায় না বা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সাহায্যেও এরা শুনতে পায় না।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শনাক্তকরণ (Identification of Hearing Impairment Children) :
কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে একজন শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিনা তা চিহ্নিত করা যায়। কোন শিশু বধির হলে তা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেলেও মৃদু বা মধ্যম মাত্রায় শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে অনুমান করা যায় না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মৃদু ও মধ্যম মাত্রায় প্রতিবন্ধীদের শনাক্তকরণ করা যায়। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে এই সমস্ত শিশুদের মধ্যে শিখন সমস্যা দেখা যায়। নিম্নলিখিত কিছু বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শনাক্তকরণ করা যায়। সেগুলি হল-
i) শিক্ষার্থীদের কোন নির্দেশ দিলে বার বার নির্দেশটি কি তা জানতে চায়।
ii) শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার সময় শিক্ষার্থী বক্তার মুখের দিকে বা ঠোটের দিকে বিশেষ নজর দেয়।
iii) শিক্ষার্থীর পেছনে কোন শব্দ হলে পিছন ফিরে তাকায় না। শব্দের উৎস অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে না।
iv) বক্তার কথা শোনার জন্য শিক্ষার্থী তার একটি বিশেষ কানকে বক্তার দিকে ঘুরিয়ে রাখে।
v) শিক্ষার্থীর উচ্চারণ পদ্ধতি সঠিক হয় না।
vi) শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে মৌখিক নির্দেশ গ্রহণের সময় বারবার সহপাঠীদের সাহায্য নেয়।
vii) বয়সের তুলনায় শিক্ষার্থীদের ভাষার বিকাশ যথেষ্ট কম হয়।
viii) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা ও অমনোযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।
ix) এই সমস্ত শিক্ষার্থীরা জোরে জোরে কথা বলে এবং নির্দিষ্ট মুষ্টিমেয় শব্দাবলী ব্যবহার করে।
x) রেডিও, টিভি সব সময় উচ্চশব্দে বাজায় যা সাধারণের কাছে বিরক্তিকর।
xi) কানের বাহ্যিক গঠনে অসঙ্গতি, অতিরিক্ত কর্ণমল নিঃসরণ, সর্বদা অস্বাভাবিক শব্দ শোনা, কানে চুলকানি, প্রায়শই ঠান্ডা লেগে গলা ফুলে যাওয়া।
xii) শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে কোন বিষয় বারবার বলার জন্য অনুরোধ করে এবং শিক্ষক মহাশয়ের কথা সঠিকভাবে শুনতে না পাওয়ায় সহপাঠীদের খাতা দেখে লেখার প্রবণতা দেখা যায়।
আরো পড়ুন
শিখন অক্ষমতার ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Learning Disability in Bengali