বুদ্ধিদীপ্ত শিশু কাদের বলে | বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Gifted Children in Bengali

বুদ্ধিদীপ্ত শিশু কাদের বলে | বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Gifted Children in Bengali

উত্তর:

বুদ্ধিদীপ্ত শিশু (Gifted Children)

যে সমস্ত শিশুদের আচরণ সাধারণ শিশুদের থেকে আলাদা, এদের চাহিদা, গ্রহণ ক্ষমতা, প্রকাশভঙ্গি এবং অন্যান্য ক্ষমতা গুলি সাধারণ শিশুদের থেকে উন্নত মানের হয়ে থাকে, সেই ধরনের শিশুদেরকে বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়ে থাকে।

বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর সংজ্ঞা (Definition of Gifted Children) :

1972 খ্রিস্টাব্দে “U. S. Commissioner of Education” বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের সংজ্ঞায় বলেছেন, যারা শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ ক্রিয়াকর্মের ঊর্ধ্বে, পৃথক এবং উন্নত ধর্মী ক্রিয়া-কলাপ করে, যা তাদের নিজেদের এবং সমাজের উন্নয়নে অধিক মাত্রায় কার্যকারী হতে সাহায্য করে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়।

Marland (1972) এর মতে, The gifted are those who posses outstanding abilities or potential in the area of general intellectual capacity, specific Academic aptitude, creative or productive thinking, leadership ability, visual or performing arts and psycho-motor activity.”

আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা I.Q. এর ভিত্তিতে বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের চিহ্নিত করার পক্ষপাতি ছিলেন। তাদের মতে, যে সমস্ত শিশুদের I.Q. 137 বা তার বেশি তাদের বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়।

Prem Pasricha (1964) এর মতে, যেসব শিশু তাদের আচরণে উন্নত সাধারণ বুদ্ধির প্রকাশ ঘটায় বা এমন সব বিশেষ ক্ষমতার উচ্চমাত্রায় পারদর্শিতা দেখায়, যার সঙ্গে উচ্চ বুদ্ধাংকের কোন সম্পর্ক নেই তাদের বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়।

1975 খ্রিস্টাব্দে, U. S. Federal Registrar এর মতে, বুদ্ধিদীপ্ত শিশু তাদেরই বলা হবে যারা বৌদ্ধিক, শিক্ষাগত, সৃজনাত্মক, কলাবিদ্যা এবং জ্ঞানমূলক দক্ষতার ক্ষেত্রে উন্নত ক্ষমতার অধিকারী হবে।

বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Gifted Children) : 

শিশুর বুদ্ধ্যঙ্কর দিক থেকে বিচার করে মনোবিজ্ঞানীরা বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের কতগুলি শ্রেণীবিভাগ করেছেন। যে সমস্ত শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক 130 এর বেশি তাদের বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিনে সাইমন অভিক্ষার 1937 খ্রিস্টাব্দের স্ট্যানফোর্ড সংরক্ষণ অনুসারে নির্ধারিত বুদ্ধাংকের মান অনুযায়ী বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে –

i) মধ্যম মাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত : যে সমস্ত শিশুদের I.Q. 130-145 এর মধ্যে তাদের মধ্যম মাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়। এরা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সাধারণ ছেলে মেয়েদের মতই হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণ ছেলে মেয়েদের থেকে কোন বিষয়ে দ্রুত শিখতে পারে।

ii) উচ্চমাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত : যে সমস্ত শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক 145-160 এর মধ্যে তাদের উচ্চমাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়। এদের সংখ্যা জনসংখ্যা প্রতি 500 জনের মধ্যে একজন। এরা সাধারণত বুদ্ধিগত ও ব্যক্তিসত্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছুটা উচ্চমানের হয়ে থাকে। 

iii) ব্যতিক্রম মাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত : যে সমস্ত শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক 160-180 মধ্যে তাদের ব্যতিক্রম মাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়। এদের সংখ্যা প্রতি হাজার জনের মধ্যে তিনজন। সাধারণ শিশুদের থেকে এরা দৈহিক দিক থেকে কিছুটা খর্বাকৃতি হয় এবং চরিত্রগত দিক থেকেও কিছুটা অদ্ভুত প্রকৃতির হয়।

iv) চূড়ান্ত মাত্রার বুদ্ধিদীপ্ত : যে সমস্ত শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক 180 থেকে বেশি তাদের চূড়ান্ত মাত্রায় বুদ্ধিদীপ্ত শিশু বলা হয়। এদের সংখ্যা শতকরা 0.03 জন। এরা সমস্ত বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা। এদের মনোভাব, আচরণ, সাধারন বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা সম্ভব হয় না।

বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের শনাক্তকরণ (Identification of Gifted Children) : 

নিম্নলিখিত কতগুলি বৈশিষ্ট্য দেখে প্রতিভাবান শিশুদের শনাক্ত করা যায়। সেগুলি হল –

i) বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক 140 বা তার বেশি হয়ে থাকে। এদের বুদ্ধির বিকাশ দ্রুত হয়।

ii) সাধারণ শিশুদের মত বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের মধ্যেও কতগুলি মৌলিক চাহিদা দেখা যায়। অন্যদের মতো এদের মধ্যেও স্নেহ, ভালোবাসা, সহানুভূতি, আত্মপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদির আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়। এদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা ও কৌতুহলের চাহিদা প্রবল মাত্রায় দেখা যায়। কোন বিষয়ের প্রতি কৌতুহল থেকে সেই বিষয়টি জানার জন্য বারবার প্রশ্ন করতে থাকে।

iii) এরা সাধারণ শিশুদের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। সমবয়সী শিশুদের তুলনায় এদের চিন্তাধারা উন্নত হয়ে থাকে। 

iv) যেকোনো বিষয় সহজেই শিখে নিতে পারে।

v) অনেক সময় এদের আচার-আচরণ সাধারণদের চোখে অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের এই আচরন গুলি নিতান্তই স্বাভাবিক।

vi) বুদ্ধিদীপ্ত শিশুদের মধ্যে মনোযোগের বিস্তার, মনোনিবেশের ক্ষমতা, চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা, যুক্তি শক্তি, আত্মবিশ্বাস, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা ইত্যাদি সাধারণ শিশুদের থেকে অনেক উন্নত মানের হয়ে থাকে।

vii) যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে গতানুগতিক পথ এরা অবলম্বন করে না। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এদের মধ্যে অভিনবত্ব দেখা যায়।

viii) বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং যে কোন প্রশ্নের তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে পারে।

ix) শিক্ষাক্ষেত্রে পারদর্শিতার দিক থেকে এরা এগিয়ে থাকে। ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা সাধারণের থেকে অনেক উন্নত মানের হয়ে থাকে।

x) এদের প্রতিভা শুধুমাত্র শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকেনা। অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেমন – সংগীত, নৃত্য, নাটক, চিত্রকলা, সৃজনশীল কার্যাবলী, যান্ত্রিক কার্যাবলী, সামাজিক নেতৃত্ব দান, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

আরো পড়ুন

শিখন অক্ষমতার ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Learning Disability in Bengali

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু কাদের বলে | শ্রেণীবিভাগ ও শনাক্তকরণ | Concept of Hearing Impairment Children in Bengali

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু | ব্যতিক্রমধর্মী শিশুর সংজ্ঞা ও শ্রেণিকরণ | বিশেষ শিক্ষা | Special Education in Bengali

দর্শন কি | দর্শনের সংজ্ঞা দাও | দর্শনের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলোচনা করো

যোগ দর্শন (Yoga Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)

সাংখ্য দর্শন (Sankhya Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)

ন্যায় দর্শন কি | শিক্ষায় ন্যায় দর্শনের প্রভাব কি | What is Nyaya Philosophy in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!