শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুর বৈশিষ্ট্য ও কারণ | Characteristics and Causes of Hearing Impairment Children

Q: শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুর বৈশিষ্ট্য ও কারণ | Characteristics and Causes of Hearing Impairment Children

উত্তর:

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু

কোন ব্যক্তির শব্দ শোনার জন্য যদি 25 ডেসিবেলের অধিক তীব্রতাযুক্ত শব্দের প্রয়োজন হয়, তবে সেই ব্যক্তিকে শ্রবণের দিক থেকে ত্রুটি সম্পন্ন বলা হয়।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics Hearing Impairment Children) :

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের কিছু বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল-

i) যে সমস্ত পরিস্থিতিতে মৌখিক যোগাযোগের প্রয়োজন হয়, সেই সমস্ত পরিস্থিতিতে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা খুব অসহায় বোধ করে। ফলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের অভাবে তাদের ব্যক্তিসত্তার বিকাশ বাধা প্রাপ্ত হয়।

ii) মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটির জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে এদের মধ্যে অঙ্গ সঞ্চালনগত সমস্যা দেখা যায় বা বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন সাধারণ শিশুদের থেকে অপেক্ষাকৃত দেরিতে হয়। 

iii) এরা অন্তর্মুখী ও বদমেজাজি হয়ে থাকে।

iv) পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করতে এদের অসুবিধে হয়। মানসিক, বৌদ্ধিক, ব্যক্তিসত্তা এবং শিক্ষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এদের বিকাশ ধীর গতিতে হয়।

v) গবেষণার থেকে জানা যায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধি সাধারণ শিশুদের মতো বা তার চেয়ে কিছু কম হয়ে থাকে। তবে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণে ধারনা গঠনের ক্ষেত্রে এরা সাধারণ শিশুদের থেকে পিছিয়ে থাকে। 

vi) সাধারণত এরা চঞ্চল প্রকৃতির অমনোযোগী, সংরক্ষণশীল হয়ে থাকে।

vii) জন্মগত শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং ভাষা শিখনের পরে শ্রবণ প্রতিবন্ধী উভয়েই, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একই পন্থা ব্যবহার করে। সাধারণ শিশুরা নিজেরাই ভাষা শেখে। কিক্ত শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাষা শেখাতে হয়। সেই কারণে এরা স্বাভাবিক শিশুদের থেকে পিছিয়ে থাকে।

viii) উচ্চারণে অস্পষ্টতা ও উপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের দুর্বলতা দেখা যায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই দুর্বলতা আরো বাড়তে থাকে।

ix) শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শব্দার্থ, বিমূর্ত চিন্তন, বাক্যের জটিল গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা যায়। লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে লিস, বিশেষ্য, ক্রিয়া, কাল, বাক্যাংশ ইত্যাদি জনিত ভ্রান্তি দেখা যায়। ফলে শিক্ষাগত দিকে এরা সাধারণ শিশুদের থেকে পিছিয়ে পড়ে।

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণ (Causes of Hearing Impairment Children) :

মানুষের কর্ণের বিভিন্ন প্রকার ত্রুটির কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা ঘটে থাকে। শ্রবণ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হতে পারে। জিনগত কারণে কিছু কিছু শিশুর বধিরতা জন্মের পূর্বেই নির্ধারিত হয়। আবার কিছু কিছু শিশুর জন্মের পরবর্তীকালে বিভিন্ন রোগ, দুর্ঘটনা প্রভৃতি কারণে শ্রবণ শক্তি হারায়। শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

শিশুর এই বধিরতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে –

1) জন্মপূর্ব কারণ :

জন্মপূর্ব যে কারণগুলি শিশুর বধিরতার জন্য দায়ী, সেগুলি হল –

i) বংশগত কারণ : যে সমস্ত শিশু জন্মগতভাবে বধির তাদের অধিকাংশেরই বধিরতার কারণ হলো বংশগতি। যদি পিতা ও মাতা উভয়েই বধির হয়, তাহলে তাদের সন্তানের মধ্যে বধিরতা আসতে পারে। বধিরতা জীনবাহিত বৈশিষ্ট্য, তাই জেনেটিক্সের নিয়ম অনুযায়ী এই বধিরতা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ii) সংক্রামিত রোগ : গর্ভাবস্থায় মা যদি সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus), টক্সোপ্লাজমোসিস (Toxoplasmosis) ও হার্পিস সিমপ্লেক্স (Herpes simplex) ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সে ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে। এছাড়াও মায়ের যদি মধুমেহ, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগ থাকে, তা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

iii) রুবেলা সংক্রমণ : গর্ভবতী মা যদি প্রথম তিন মাসের মধ্যে রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তবে গর্ভস্থ ভ্রুণের ককলিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশু সম্পূর্ণ বধির বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে।

iv) অপুষ্টি : গর্ভবতী মা যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তবে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে হবে না। ফলে শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে।

v) অত্যাধিক ওষুধ ও অ্যালকোহল সেবন : গর্ভবতী মা যদি খালিডোমাইড (Thalidomide) জাতীয় ঔষধ এবং বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করেন তবে, গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। ফলে নবজাতক শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা সহ বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মাতে পারে।

2) জন্মকালীন কারণ :

i) জন্মকালীন অসাবধানতা : শিশুর জন্মের সময় অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে বিভিন্ন অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নবজাতক শিশু স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। ফলে শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।

ii) জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট : জন্মের সময় শিশুর গলায় জন্মনাড়ি পেচিয়ে গেলে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হয় এবং শিশুর মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। ফলে মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শিশু বধির হয়।

3) জন্ম পরবর্তী কারণ :

i) ভাইরাস সংক্রমণ : কোন শিশু হাম, মাম্পস ও ম্যানিনজাইটিস দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং তার সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে শিশুর শ্রবন ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।

ii) অতিরিক্ত মাত্রায় ঔষধ সেবন : স্ট্রেপটোমাইসিন, অ্যামিনো গ্লাইকোসাইড, কুইনাইন ইত্যাদি ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় শিশু শরীরে প্রবেশ করলে পরবর্তীকালে শিশু বধির হতে পারে।

iii) বাহ্যিক আঘাত : কোন কঠিন পদার্থ, দূষিত জল, মাটি ইত্যাদি শিশুর কানের মধ্যে যাতে প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এগুলি বহিঃকরণের ক্ষতিসাধন করতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রায় ঠান্ডা লাগা, গলা ফুলে যাওয়া, এলার্জি প্রভৃতি মধ্য কর্ণের ক্ষতি করতে পারে।

iv) শব্দ দূষণ : নবজাতক শিশু যদি অধিক জোরালো শব্দ শুনে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে শিশু বধির হতে পারে।

আরো পড়ুন

শিখন অক্ষমতার ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Learning Disability in Bengali

বুদ্ধিদীপ্ত শিশু কাদের বলে | বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Gifted Children in Bengali

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু | ব্যতিক্রমধর্মী শিশুর সংজ্ঞা ও শ্রেণিকরণ | বিশেষ শিক্ষা | Special Education in Bengali

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু কাদের বলে | শ্রেণীবিভাগ ও শনাক্তকরণ | Concept of Hearing Impairment Children in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!