শিক্ষার পরিধি গুলি আলোচনা করো

শিক্ষার পরিধি গুলি আলোচনা করো।
অথবা, শিক্ষার পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, শিক্ষার পরিধি আলোচনা করো।

উত্তর:

শিক্ষার পরিধি

শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশু জন্ম গ্রহণের পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করে। শিশু প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শেখে। মানুষের শেখার যেমন শেষ নেই তেমনি শিক্ষার পরিধিরও সীমা নেই। শিক্ষা কেবলমাত্র কতগুলি তাত্বিক বিষয় নিয়ে আলােচনা করে না। শিক্ষা হল প্রয়োগমূলক সমাজবিজ্ঞান। ব্যক্তি ও সমাজের উভয়ের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। শিক্ষা ছাড়া সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যক্তির আচরণকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নির্ণয় করা শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ। আর এই কাজে মনােবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, পরিসংখ্যান প্রভৃতি শিক্ষাবিজ্ঞানকে সাহায্য করে থাকে। এইসব বিষয় থেকে শিক্ষা বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে শিক্ষার পরিধি ও যথেষ্ট বিস্তৃত।

দর্শন: দর্শন শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আদর্শগত দিক, পাঠক্রম শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয় নির্ণয়ে সাহায্য করে। দর্শনের কাজ হল বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান দান করা। বিশ্বজগৎ ও জীবন সম্পর্কে আমাদের মনে যে ধারণা জেগে ওঠে সে সম্পর্কে সুসংহত ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান দান করা। দর্শনের ভাববাদ, প্রয়োগবাদ, প্রকৃতিবাদ ইত্যাদি মতবাদ গুলির মাধ্যমে কোন দেশে শিক্ষার লক্ষ্য কিরূপ হবে তা ঠিক করে দেয়।

সমাজবিজ্ঞান: সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল সামাজিক কাঠামাে, সামাজিক আচার-আচরন ও সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আলাচনা করা। শিশুকে একজন উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা কিরূপ হওয়া উচিত তার নির্দেশ দেয়। ব্যক্তির শিক্ষা কিরূপ হলে সমাজের উন্নতি হবে সেই সমস্ত সব বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলােচনা করে।

মনােবিজ্ঞান: আধুনিক শিক্ষার বিকাশে মনােবিজ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে। প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে মনােবিজ্ঞান সম্মত ছিল না। কিন্তু আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা মনােবিজ্ঞান সম্মত। মনােবৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। মনােযােগ, স্মৃতি, শিখন প্রক্রিয়া, বুদ্ধি, ব্যক্তিগত বৈষম্য, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষাবিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতিতে সাহায্য করে। এর প্রধান কাজ হল বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলােচনা করা। শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিসর ক্রমবর্ধমান। বিভিন্ন বিষয় শিক্ষাবিজ্ঞানের উন্নতিতে সাহায্য করে। সেগুলাে নিচে আলােচনা করা হল – 

i. শিশুর জীবন বিকাশের ধারা: শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রধান কাজ হল শিশুর দৈহিক, মানসিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশের বিভিন্ন দিক গুলি পর্যবেক্ষণ করা। জন্মের পর থেকে শিশুর ভাষার বিকাশ, কৈশােরের আচার-আচরণ ও তার চাহিদা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্গত।

ii. ব্যক্তিত্বের বিকাশ: ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন সংলক্ষণগুলির ক্রমবিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়বস্তুর শ্রেণীবিভাগ করা শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রধান কাজ। সেজন্য ব্যক্তিত্বের বিকাশ বিষয়টি শিক্ষাবিজ্ঞানের কর্মপরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

iii. মানসিক গুণাবলী: প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক গুণাবলী থাকে। যেমন- প্রবৃত্তি, চাহিদা, বুদ্ধি, মনােযােগ, স্মৃতি, শিখন প্রক্রিয়া, চিন্তন, বিচার করার ক্ষমতা, কল্পনাশক্তি, অভ্যাস ইত্যাদি। তাই ব্যক্তির সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান। 

iv. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র: সমস্ত শিশুর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা একরকম নয়। সেজন্য পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্ধারণ, শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের উপর নির্ভর করে। তাই ব্যক্তিগত বৈষম্যের প্রভাব, বৃত্তি নির্বাচনে ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতি ইত্যাদি শিক্ষাবিজ্ঞানে কর্মপরিধির অন্তর্ভুক্ত।

v. শিখন প্রক্রিয়া: কোন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করলে শিশুরা শিখনে আগ্রহী হবে, প্রেষণা ও চাহিদার উপর শিক্ষা কতটা নির্ভর করে, শিখন সঞ্চালন হয় কিনা ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। শিখন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলােচনা করা ও তার সমাধান করা শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

vi. মূল্যায়ন: আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রধান কাজ হল বিজ্ঞানসম্মত সার্থক পরীক্ষা পদ্ধতির উদ্ভাবন করা। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী কতটা শিখল তার মূল্যায়ন করা যায়।  

মানসিক স্বাস্থ্য: দৈহিক স্বাস্থ্যের মত শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যও সুগঠিত হওয়া দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য যদি সঠিক না থাকে তাহলে শিক্ষাদান বৃথা পরিশ্রম মাত্র। তাই একজন শিক্ষার্থী মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কিনা, যদি কোনাে মানসিক অসুস্থতা থাকে তা নির্ধারণ করা এবং কোন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করলে সেই শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পন্ন হবে তা নির্ধারণ করে শিক্ষা বিজ্ঞান।

নির্দেশনা: শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষা ও বৃত্তি সম্বন্ধে যথাযথ নির্দেশ দান করা শিক্ষা বিজ্ঞানের কাজ। শুধু শিক্ষাগত নির্দেশনাই নয় ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী কোন বৃত্তি গ্রহণ করলে সফল হবে, কারা এই নির্দেশ শিক্ষার্থীকে দেবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলােচনা করেন শিক্ষা বিজ্ঞান।

শিক্ষা প্রযুক্তি: বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শিক্ষাব্যবস্থাও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা শিক্ষাকে আরাে সহজ ও কার্যকরী করে তুলছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও দূরদর্শন এর ব্যবহারের মাধ্যমে একসাথে অনেক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা যায়। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপরিউক্ত আলােচনা থেকে বলা যায় শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যা উদ্ভব হচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য, পাঠক্রম, পঠন পাঠনের পদ্ধতি, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে শিক্ষা বিজ্ঞানের পরিধি ও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরো পড়ুন

শিক্ষার উপাদান গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো | Factors of Education in Bengali

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা করো | Nature and Scope of Educational Psychology in Bengali

প্রকৃতিবাদ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃতিবাদী দর্শনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

সনদ আইন (1813) | সনদ আইনের উদ্দেশ্য | সনদ আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মুদালিয়র কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি কী কী | এই প্রসঙ্গে সপ্ত প্রবাহ ধারণাটি বর্ণনা করাে

শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো | Nature of Educational Psychology in Bengali

শিখনের গেস্টাল্ট তত্ব | শিক্ষাক্ষেত্রে গেস্টাল্ট তত্বের প্রয়ােগ | Gestalt Theory of Learning in Bengali

Class 8 English 3rd Unit Test Question Paper 2022 PDF With Answer

Leave a Comment

error: Content is protected !!