শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো | Nature of Educational Psychology in Bengali
উত্তর:
শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি
শিক্ষা মনােবিজ্ঞান হল সাধারণ মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা। শিক্ষা বলতে আমরা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য কল্যাণ কর আচরণ গুলি আয়ত্ত করাকে বুঝি। আর মনােবিজ্ঞান হল আচরণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান। মনােবিজ্ঞানের কাজ হল মনের বিভিন্ন আচরণ, প্রকৃতি আলােচনা করা। শিক্ষাদান প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ, সরল করার জন্য এবং শিক্ষা দানের সময় যে সমস্ত সমস্যার উদ্ভব হয় সেগুলির সমাধানের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানের নীতি গুলি প্রয়ােগ করা হয়। এইভাবে শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যে বিকাশ ঘটে এই বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় গুলির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় ব্যক্তির মধ্যে বিকাশের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে তা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান। তাই বলা যায় শিক্ষা মনােবিদ্যা হল মনােবিজ্ঞানের এমন একটি প্রয়োগমূলক দিক যেখানে শিক্ষাসংক্রান্ত আচরণ নিয়ে বিশ্লেষণ করে এবং আচরণকে আরাে কিভাবে উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে আলােচনা করে।
তাই বলা যায় শিক্ষা মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা হলেও বর্তমানে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান কে একটি আলাদা বিষয়ে রূপে পরিগণিত করা হয়েছে। শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি গুলি হল –
1) শিক্ষা মনােবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি পৃথক বিষয়: শিক্ষা মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা বলে বিবেচিত হলেও বর্তমানে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। কোন বিষয়কে পৃথক বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলে তাকে কতগুলি শর্ত পালন করতে হয়। বিষয়টিকে যথেষ্ট বিস্তৃত হতে হবে, তার নিজস্ব অনুশীলন পদ্ধতি ও সমস্যা থাকবে যার ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমস্যা সমাধানের উপায় নির্দিষ্ট করা যাবে। বিষয়টিকে আরও সমৃদ্ধ করা যাবে। শিক্ষা মনােবিজ্ঞান এই সমস্ত শর্ত গুলি পূরণ করে। তাই শিক্ষা মনােবিজ্ঞান একটি পৃথক বিষয় হিসাবে স্বীকৃত।
2) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ: শিক্ষা মনােবিজ্ঞান তার বিষয়গুলি অনুশীলনের জন্য দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। ব্যক্তিনির্ভর পদ্ধতি ও নৈব্যক্তিক পদ্ধতি। ব্যক্তিনির্ভর পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হল – পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, কেস স্টাডি পদ্ধতি, তুলনামূলক পদ্ধতি, অন্তর্দর্শন পদ্ধতি ইত্যাদি। নৈব্যক্তিক পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হল – পরীক্ষণ পদ্ধতি, জেনেটিক পদ্ধতি, পরিসংখ্যান পদ্ধতি, সার্ভে পদ্ধতি ইত্যাদি।
3) গতিশীলতা: শিক্ষামনােবিজ্ঞানতার আলােচ্য বিষয় গুলির উপর গবেষণার ফলে শিক্ষার নতুন নতুন দিকের উন্মােচন ঘটছে ও পুরনাে ধারণা গুলির পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে নতুন তথ্য, নীতি ও সূত্র আবিষ্কার হচ্ছে যা শিক্ষাবিজ্ঞানকে আরও উন্নত ও কার্যকারী করে তুলেছে। তাই বলা হয় শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি গতিশীল।
4) স্বতন্ত্র পরীক্ষামূলক দিক: শিক্ষামনােবিজ্ঞান শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র, শিখন সঞ্চালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক চিন্তা করতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে শিক্ষককে শিক্ষাদানের কৌশল, শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থার বিচার, শ্রেণিকক্ষে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান প্রভৃতি বিষয়ে মনােবৈজ্ঞানিক ধারণা সরবরাহ করে।
5) আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান: শিক্ষামনােবিজ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজের ভালাে হয় এমন বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। ব্যক্তি ও সমাজের ক্ষেত্রে কোন ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান আলােচনা করেনা।
6) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র: শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান ব্যক্তিগত পার্থক্যকে গুরুত্ব দেয়। ব্যক্তিগত পার্থক্য একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। ব্যক্তিগত পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান তার বিষয়ে গুলিকে পর্যালােচনা করে।
7) শিক্ষা মনােবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞান: শিক্ষা মনােবিজ্ঞান শিক্ষা ও মনােবিজ্ঞান এই দুই বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সমাজবিদ্যা, জীববিদ্যা, শারীরবিদ্যা, পরিসংখ্যান, প্রযুক্তিবিদ্যা, কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৃতি বিষয়ক তথ্য ও তত্ব শিক্ষা মনােবিদগন ব্যবহার করে শিক্ষা মনােবিজ্ঞানকে আরাে উন্নত ও কার্যকর করে তুলেছে।
6) শিক্ষার্থীর আচরণ সংশােধন: শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি কোন অপসংগতিমূলক ও অপরাধমূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায় তার পরিবর্তন ঘটানাে। শিক্ষা মনােবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের এই ধরনের আচরণের কারণ অনুসন্ধান করে এবং তার প্রতিকারের জন্য শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকে। শিখন কার্যকে আরাে বেশি কার্যকরী করে তােলার জন্য শিক্ষার্থীদের আচরণের পরিবর্তন ঘটায়।
আরো পড়ুন
হান্টার কমিশন (Hunter Commission) | হান্টার কমিশন কেন গঠিত হয় | হান্টার কমিশনের সুপারিশ
বাল্যকাল | বাল্যকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য | বাল্যকালের চাহিদা | Childhood in Bengali
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ