মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের বা মুদালিয়ার কমিশনের ত্রুটি গুলি কি কি
মুদালিয়ার কমিশনের ত্রুটি
মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। ব্রিটিশ ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষা ছিল বহু ত্রুটিপূর্ণ। কমিশন সেইসব সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলােচনা করেছিলেন। কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেখানে শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলীর যথাযথ বিকাশের সুযােগ থাকবে। এমনভাবে পাঠক্রম রচনা করতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার চাহিদা অনুযায়ী বিকাশের সুযােগ পাবে। এই উদ্দেশ্যে কমিশন বহুমুখী পাঠক্রমের সুপারিশ করেছিলেন। আধুনিক শিক্ষা মনােবিদদের মতে কমিশনের এই দৃষ্টিভঙ্গি – সর্বাধুনিক তবে, তত্ব ও আদর্শগত দিক থেকে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ গুলি আকর্ষণীয় হলেও প্রযােগের দিক থেকে এর কতগুলাে ত্রুটি ছিল। সেগুলি হল –
1) কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করেছিল কিন্তু কিভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানাে যাবে তার সঠিক পরিকল্পনা করেননি। ফলে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
2) কমিশন বহুমুখী পাঠক্রমের সুপারিশ করেছিলেন। এর জন্য প্রযােজন ছিল অধিক সংখ্যক বহুমুখী বিদ্যালয়ের, কিন্তু বাস্তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিকে পরিকল্পনার অভাবে বহুমুখী বিদ্যালয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।
3) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন পাঠক্রমের ঐচ্ছিক বিষয়গুলি কে ‘7’ টি মূল প্রবাহে ভাগ করেছেন, একে সপ্তপ্রবাহ বলা হয়। এই সাতটি বিষয় হল –
i) মানবিক বিদ্যা (Humanities)
ii) বিজ্ঞান (Science)
iii) কারিগরি বিদ্যা (Technical)
iv) বাণিজ্য (Commerce)
v) কৃষিবিদ্যা (Agricultural Science)
vi) চারুকলা (Fine Arts)
vii) গার্হস্থ্য বিজ্ঞান (Home Science)
অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সাত ধরনের শিক্ষাপ্রবাহের মধ্যে কেবলমাত্র কলা ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করা হতাে।
4) কমিশন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা, সামর্থ্য এবং যােগ্যতা অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয়নি।
5) অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর কমিশন শিক্ষার্থীদের সাতটি শিক্ষাপ্রবাহের মধ্য থেকে যে কোন একটি বিষয় নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তাও বিজ্ঞানসম্মত নয়।
6) অধিকাংশ বিদ্যালয় সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ও পরামর্শ দানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব ছিল।
7) মুদালিয়ার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষার সংস্কারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক নির্দেশ দানের অভাবে মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়ন ব্যবস্থা আজও পরীক্ষা কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের মূল উদ্দেশ্য হল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। জ্ঞানঅর্জন, দক্ষতা লাভ, চারিত্রিক বিকাশ প্রভৃতি তাদের কাছে মূল্যহীন।
আরো পড়ুন
গঠনবাদ | শিখনের গঠনবাদ তত্ত্ব | ভিগটস্কির শিখন মতবাদ | Constructivism in Bengali
লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি | Lord Curzon-Educational Policy in Bengali
শিক্ষণ কি | শিক্ষনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য | What is Teaching | Nature and Characteristics of Teaching