শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা (Educational Psychology in Bengali)
Ans:
শিক্ষা মনােবিজ্ঞান হল মনােবিদ্যার সেই শাখা যা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার বিকাশের ধারা কে অনুশীলন করে।
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের সংজ্ঞা
মনােবিদ গেটস বলেছেন, “জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সমস্তরকম শিক্ষনীয় আচরণ অধ্যয়ন করার জন্য গঠিত মনােবিদ্যার শাখা হল “শিক্ষা মনােবিদ্যা”।
স্কিনার বলেছেন , “শিক্ষা মনােবিজ্ঞান হল মনােবিজ্ঞানের সেই শাখা যা শিখন ও শিক্ষণ নিয়ে কাজ করে”।
মনােবিদ বার্নাড বলেছেন , “শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের কাজ হল শিখন ও শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়, বিশেষত বিদ্যালয়ের শিখন ও শিক্ষণ বিষয়ে আলােচনা করা”।
মনােবিদ জাড বলেছেন, “শিক্ষা মনােবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যা ব্যক্তিজীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিকাশের বিভিন্ন স্তরের যে পরিবর্তন ঘটে তার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে”।
শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের ভূমিকা
শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার কাজ হল ব্যক্তির আচরণ আয়ত্ত করা এবং সংশােধন করা। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান হল ব্যক্তির শিক্ষাকালীন আচরণের বিজ্ঞান। অর্থাৎ, শিক্ষাকে কার্যকরী করে তুলতে শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিহার্য। আচরণের বিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আচরণ আয়ত্ত করা এবং আচরনে সংশােধন করা সম্ভব নয়। সেজন্য একজন সফল শিক্ষক হতে গেলে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
1) ব্যক্তির বিকাশ সম্পর্কে ধারণা: জীবন বিকাশের প্রত্যেকটি স্তরের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রযেছে। শিক্ষার্থীর এই বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে শিক্ষকের সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়ােজন। যা শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে।
2) ব্যক্তিগত পার্থক্য: প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে এমন ভাবে শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর সুপ্ত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। এই বিষয়ে শিক্ষামনােবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
3) শিক্ষার্থীর সমস্যার সমাধান: শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা সমস্যা দেখা যায়। শিক্ষকের কাজ হল সঠিক সময়ে তার সমাধান করা তা নাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানারকম সমস্যামূলক আচরণ দেখা যায়। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের এই শিখন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
4) শিক্ষণ পদ্ধতি: শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতি নির্বাচনে শিক্ষা মনােবিদ্যা সাহায্য করে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত নতুন তথ্যের উদ্ভাবন ঘটছে, মানুষের চিন্তা ধারার ও পরিবর্তন ঘটছে। শিক্ষা মনােবিজ্ঞান নতুন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষণ পদ্ধতি নির্বাচনে সাহায্য করে এবং অপ্রয়ােজনীয় শিক্ষণ পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে সাহায্য করে। যার মাধ্যমে শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
5) শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থিরীকরণ: শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থির করার ক্ষেত্রে শিক্ষা মনােবিদ্যা বিশেষভাবে সহায়তা করে। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদা ও সামর্থ্যের পরিবর্তন ঘটে। বাস্তবিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শিক্ষা মনােবিদ্যা বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
6) পাঠক্রম নির্বাচন: পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষা মনােবিজ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা, সামর্থ্য তাদের বিকাশের প্রকৃতি, শিখন প্রক্রিয়া, সামাজিক চাহিদা ইত্যাদি উপর ভিত্তি করে পাঠক্রম রচনা করতে হয়। যা শিক্ষার্থীকে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বিধানের সহায়তা করে।
7) সময় তালিকা প্রস্তুত: শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত সময় তালিকা প্রস্তুতের জন্য মনস্তত্বের জ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে। কোন সময় শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত, কোন সময় শিক্ষার বিরতি দেওয়া উচিত, কোন বিষয়গুলি দিনের প্রথমে পাঠদান করা হবে এবং কোন বিষয়গুলিকে শেষের দিকে স্থান দেয়া হবে। সে সম্বন্ধে ধারণা আমরা শিক্ষা মনােবিদ্যা থেকে পেয়ে থাকি।
8) নতুন চিন্তাধারার প্রয়োগ: শিখন প্রক্রিয়াকে উন্নত করার জন্য নতুন নতুন চিন্তা ধারা প্রয়ােগ করা হয়েছে গতানুগতিক শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে বাদ দিয়ে নতুন চিন্তা ধারা প্রয়ােগ করা হয়েছে। যেমন, সক্রিয়তা ভিত্তিক পদ্ধতি, আলােচনা পদ্ধতি,আবিষ্কার পদ্ধতি, অনুশিক্ষণ পদ্ধতি, পরিকল্পনা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি ইত্যাদি। শিক্ষা মনােবিদ্যা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে ।
9) পাঠ্যপুস্তক রচনা: শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা, শিক্ষার সময় তালিকা প্রস্তুত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পাঠ্যপুস্তক রচনা করা ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ও শিক্ষা মনােবিদ্যা বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, চাহিদা, আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা মনােবিদ্যা বিশেষভাবে সাহায্য করে। এমনভাবে পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে যা শিক্ষার্থীদের মনােযােগ আকর্ষণ করবে।
উপরােক্ত আলােচনা থেকে বলা যায় শিক্ষা মনােবিদ্যা ছাড়া শিক্ষাকে কে কার্যকর করা সম্ভব নয়। শিক্ষা মনােবিদ্যা শুধুমাত্র শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ, পদ্ধতি নির্বাচন করে না, শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান গুলির মধ্যে সুষ্ঠু সংগতি বিধান ও সঠিক পরিচালনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাকে কার্যকারী করে তােলে। মনােবিদ্যার উপর ভিত্তি করে শিক্ষাকে আরাে উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত করে তােলা সম্ভব।
আরো পড়ুন
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য | Aims of Educational Psychology in Bengali
মনোবিজ্ঞান কি | শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক কি | Psychology in Bengali
অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড বলতে কী বােঝাে | নবােদয় বিদ্যালয় সম্পর্কে আলােচনা করাে
শিক্ষা কি | শিক্ষার ধরন | শিক্ষার বুৎপত্তিগত অর্থ | শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকদের অভিমত
কৈশােরকালের চাহিদা ও বিকাশগত বৈশিষ্ট্য গুলি আলােচনা করো