বাংলা নাট্য সাহিত্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা নাট্য সাহিত্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

উত্তর:

বাংলা নাট্য সাহিত্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

ঠাকুরবাড়িতে নাট্যসাধনার যে প্রকাশ ছিল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াসে যা একটা সমৃদ্ধ শিল্পরূপ পায় রবীন্দ্রনাথ তাকে আরো পূর্ণ ও বিকশিত করে তোলেন। নাট্যরচনায় রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা বিস্ময়কর শিল্পময়তায় অভিব্যক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের নাট্যবোধ সূক্ষ্ম, সুকুমার ও পরিমার্জিত; তৎকালীন রীতির স্থূলতা ও আতিশয্যকে পরিহার করে এক শোভন সুন্দর শিল্পরূপ তিনি নির্মাণ করেছিলেন। অতীত জীবন সমাজ ধর্ম ইত্যাদি তাঁর নাটকের বিষয় হয়েছে- ইতিহাসের মায়ার মধ্য থেকে তিনি যন্ত্রসংঘাতময় জীবনের রূপ প্রস্ফুটিত করেছেন।

অনেক সমালোচক রবীন্দ্রনাথের নাটককে গভীর ভাবসমন্বিত ও তত্বমূলক মনে করেন। আঙ্গিকের দিক থেকেও তিনি অসামান্য। প্রথম দিকের নাটকে তিনি ঘাতপ্রতিঘাতময় দ্বন্দ্বসংক্ষুব্ধ কাহিনী নির্মাণ করেন, ক্রমে তিনি অন্তর্মুখী হয়ে উঠলেন; তাঁর আঙ্গিকেও এল প্রকাশরূপের সহজ সারল্য, সংলাপের দ্যুতি, গীতিকবিতার সুসমা।

রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়—

১. গীতি ও কাব্যধর্মী নাটক : ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ (১৮৮১), ‘কালমৃগয়া’ (১৮৮২), ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ (১৮৮৪), ‘চিত্রাঙ্গদা’ (১৮৯২), ‘বিদায় অভিশাপ’ (১৮৯৪) প্রভৃতি এই পর্যায়ের অন্তর্গত। 

২. প্রচলিত নীতিনিষ্ঠ নাটক : ‘রাজা ও রাণী’ (১৮৮৯), ‘বিসর্জন’ (১৮৯০), ‘মুকুট’ (১৯০৮), “প্রায়শ্চিত্ত’ (১৯০৯), ‘তপতী’ (১৯২৯), ‘বাঁশরী’ (১৯৩৩)।

৩. কৌতুক নাটক : ‘গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা’ (১৮৯৭), ‘ব্যঙ্গকৌতুক’ (১৯০৭), ‘শেষরক্ষা’ ( ১৯২৮), ‘চিরকুমার সভা’ (১৯৩৬) হাস্যরসের নাটক।

৪. ঋতু নাটক : শারদোৎসব’ (১৯০৮), ‘ফাল্গুনী’ (১৯১৬), (১৯২৩), ‘ শেষবর্ষণ’ (১৯২৫), ‘শ্রাবণগাথা’, ‘বসন্ত’ (১৯২৮)।

৫. নৃত্যনাটক : ‘নটীর পূজা’ (১৯২৬), ‘শাপমোচন’ (১৯৩৩), ‘তাসের দেশ’ (১৯৩৩), ‘চণ্ডালিকা’ (১৯৩৩), ‘শ্যামা’ (১৯৩৯) প্রভৃতি এই পর্যায়ভুক্ত।

৬. রূপক ও সাংকেতিক নাটক : ‘রাজা’ (১৯১০), ‘অচলায়তন’ (১৯১২), ‘ডাকঘর’ (১৯১২), (১৯১৯), ‘মুক্তধারা’ (১৯২২), ‘রক্তকরবী’, ‘অরূপরতন’ (১৯২৪), ‘কালের যাত্রা’ (১৯৩২) প্রভৃতি রূপক ও সাংকেতিক নাটকের পর্যায়ভুক্ত।

নিম্নে কয়েকটি বিশেষ নাটকের আলোচনা করা হলো:

১. চিত্রাঙ্গদা : গীতিধর্মী কাব্যনাটক চিত্রাঙ্গদার মূল কাহিনি রবীন্দ্রনাথ মহাভারত থেকে সংগ্রহ করেছেন। চিত্রাঙ্গদা কুরুপা বলে অর্জুন তাকে প্রত্যাখ্যান করলে চিত্রাঙ্গদা মদন ও বসন্তের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে পরমা সুন্দরী হয়। সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে অর্জুন চিত্রাঙ্গদার সান্নিধ্য কামনা করে। শেষে অর্জুন সৌন্দর্যভোগে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং চিত্রাঙ্গদার প্রকৃত পরিচয় পেয়ে তার প্রতি সত্য প্রেমে আবদ্ধ হয়।

২. বিদায় অভিশাপ : ‘বিদায় অভিশাপে’র কাহিনি অংশে রবীন্দ্রনাথ বিবৃত করেছেন, শুক্রচার্যের নিকট হইতে, সঞ্জীবনী বিদ্যা শেখার জন্য বৃহস্পতির পুত্র কচকে দেবতারা দৈত্যগুরুর আশ্রমে প্রেরণ করেন। সেখানে কচ সহস্র বর্ষ নৃত্যগীত বাক্য দ্বারা শুক্রকন্যা দেবযানীর মনোরঞ্জন করে সঞ্জীবনী বিদ্যালাভ করেন। অবশেষে যখন বিদায়ের সময় উপস্থিত হয় তখন দেবযানী তাকে প্রেমনিবেদন করেন এবং আশ্রম ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। দেবযানীর প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও কচ নিষেধ না মেনে দেবলোকে গমন করেন। পরিশেষে কচ কে নিজের হৃদয় সিংহাসনে বেঁধে রাখতে না পেরে দেবযানি অভিশাপ দিলেন কচ যে সঞ্জীবনী বিদ্যা শিখেছেন তা কোনদিনই প্রয়োগ করতে পারবে না। একজন পুরুষ মহত্তর আদর্শের জন্য প্রীয়াকে ত্যাগ করিতে পারে, এ তত্ত্বটি এখানে ব্যক্ত হয়েছে। 

৩. ‘রাজা ও রাণী’ নাটকে জলন্ধরের রাজা বিক্রম কাশ্মীরের কন্যা সুমিত্রার প্রতি অত্যাসক্ত হয়ে রাজকার্য অবহেলা করলে  প্রজাদের ওপর রাণীর পিতৃকুলের লোকেদের শোষণ প্রবল হলে রাণী সুমিত্রা রাজ্যকল্যাণার্থে প্রাসাদ ছেড়ে চলে যান ও ভ্রাতা কুমারের সাহায্যে কাশ্মীরের সেনা এনে তার আত্মীয়দের দমন করতে ও জলন্ধর রাজ্যে শান্তি আনতে প্রয়াসী হন। রাণীর চলে যাওয়ায় ও কাশ্মীর সেনাদের নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণায় অপমানিত ক্রুদ্ধ রাজা বিক্রম কাশ্মীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযান করেন, তাদের গ্রাম জনপদ ধ্বংস করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত কুমার আত্মসমর্পণের নামে আত্মবিনাশ করেন, সুমিত্রা ও প্রাণত্যাগ করেন। তখন রাজার চৈতন্য ফেরে।

৪. ‘বিসর্জন’- ‘-এর মধ্যে কবির হিংসা ও রক্তপাতবিরোধী মানসিকতার তীব্র নাটকীয় প্রকাশ ঘটেছে। ভিখারিনী বালিকা অপর্ণা মন্দিরে তার পালিত ছাগশিশুর হত্যার কথা রাজা গোবিন্দমাণিক্যকে জানালে রাজা মন্দিরে ছাগবলি নিষিদ্ধ করেন। বলিদানের প্রবল সমর্থক বুদ্ধ পূজারী রঘুপতি বলিদান চালু রাখতে চান এবং জয়সিংহকে আদেশ করেন, ‘রাজরক্ত চাই’ কারণ সেটাই দেবীর প্রত্যাদেশ। অপর্ণা জ্যাসিংহকে হিংসার পথ থেকে সরাতে চাইলে রঘুপতি ক্রুদ্ধ হয়। রঘুপতি জয়সিংহকে কালীর পা ছুঁয়ে শপথ করানোয় সে রাজরক্ত আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। এক ঝঞ্ঝামুখর প্রলয়নৃত্যরত ভয়ংকর রাতে দেবীর সামনে জয়সিংহ আত্মহত্যা করে কারণ সেও এক রাজবংশের উত্তরপুরুষ। রঘুপতি মর্মছেঁড়া হাহাকারে ভেঙে পড়েন, কালীমূর্তি নদীবক্ষে নিক্ষেপ করে অপর্ণার হাত ধরে চলে যান। কবির বক্তব্য এই যে ‘প্রেমের পথ ও হিংসার পথ এক নয়, প্রেমেই দেবতার পূজা হিংসায় নয়।

৫. বৈকুন্ঠের খাতা : ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ (১৮৯৭) -য় দেখা যায়, আত্মভোলা বৃদ্ধ বৈকুণ্ঠ লিখতে লিখতে খাতা ভরিয়ে ফেলেন। লেখার খেয়ালে সংসার ও জীবন সম্পর্কে অচেতন হয়ে পড়েন। যিনি বৈকুণ্ঠবাবুর লেখার কদর করেন, তাকেই তিনি ভালোবাসেন। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগান কেদার ও তিনকড়ি। নাটকটি তিনটি দৃশ্যে: ক. প্রথম দৃশ্যে কেদারের প্রচেষ্টায় বৈকুন্ঠের ভাই অবিনাশের সঙ্গে তার শালিকা মনোরমার বিবাহ। খ. মনোরমার প্রতি অবিনাশের বিয়ের প্রস্তাব এবং অবিনাশের প্রেমকাতরতা। গ. বিবাহ সম্পন্ন হয়। বৈকুণ্ঠের বাড়িতে অবিনাশের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা থাকতে শুরু করে। বৈকুন্ঠ নিজের বাড়ি ছেরে চলে যেতে উদ্যত হয়। অবিনাশ তখন বাড়ি থেকে সকলকে বের করে দিয়ে দাদার মনে শান্তি ফিরিয়ে আনে। নাটকটির মধ্যে কৌতুক রসের মোড়কে কলকাতার মধ্যবিত্ত জীবনের চালচিত্র কে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৬. মুক্তধারা : নাটকে দেখা যায় রণজিৎ মনুষ্যত্বহীন শুভবুদ্ধি-লুপ্ত বলেই অত্যাচারী রাজা। বিভূতি ইঞ্জিনিয়ার। সে যন্ত্রশিল্পী। যন্ত্রের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে দেবতার চেয়েও নিজেকে বেশী শক্তিমান মনে করে। সেনাপতি বিজয়লাল একেবারে রাজার আজ্ঞাবহ দাস। নাটকে উত্তরকূট ও শিবতরাই-এর নাগরিকদের ঘন ঘন আগমন তাদের কথোপকথন আছে। তবে দুই দেশের বৈরিতা প্রবল হওয়ায় তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঈর্ষা বোধ আছেই। মুক্তধারায় কবি যান্ত্রিক ও যন্ত্র সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছেন যা পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থারই আর এক রূপ। 

৭. রক্তকরবী : এই নাটকে যক্ষপুরীর অধিপতি একটি জটিলজালের আবরণে বাস করেন। জালটির বাইরে যাবতীয় নাট্য ঘটনা ঘটে চলছে। কর্ষণজীবী সভ্যতার সঙ্গে আকর্ষণজীবী সভ্যতার দ্বন্দই নাটকটির মূল কথা। এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের মধ্যে নন্দিনী কিভাবে আপন প্রভাব বিস্তার করে রাজাকে উদ্ধার করল এবং প্রাণহীন যক্ষপুরীতে সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রাণের প্রবাহ নিয়ে এলো এই নাটকে সেই কথাই বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রক্তকরবী নাটকের রবীন্দ্রনাথ ধনতন্ত্র ও পুঁজিবাদকে আক্রমণ করেছেন।

৮. ‘অচলায়তন’ নাটকে নিষ্প্রাণ নির্মম জড় সমাজকে রবীন্দ্রনাথ আক্রমণ করেছেন। উচ্চ বর্ণের ওপর আঘাত হেনেছেন এবং অন্ত্যজ ব্রাত্যদের হাতে অস্ত্র দিয়েছেন যেন সে তার অধিকার অর্জন করে।

৯. চণ্ডালিকা : প্রকৃতি দলিত সমাজের মেয়ে এবং তথাকথিত উচ্চ সমাজের কাছে সে ধীকৃত। একদিন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আনন্দর অনুপম সুন্দর নির্মম মূর্তি ও তার মানবিকতা প্রকৃতিকে অভিভূত করে। আনন্দ তার দেওয়া জল খেয়েছে এবং তার হৃদয়কে জাগ্রত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি আনন্দকে পাওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে পড়ে । মেয়ের কথা রাখতে প্রকৃতির মা যাদুমন্ত্রের দ্বারা আনন্দকে টেনে আনে। আনন্দর ব্যাকুল বিধস্ত রূপ দেখে প্রকৃতি বেদনায় অধীর ব্যাকুল হয়। অন্যদিকে যন্ত্রণাময় শক্তির প্রয়োগে প্রকৃতির মা মারা যায়। আনন্দ প্রকৃতির কাছে এসে উচ্চারণ করে প্রাণের মন্ত্র। নাটকটির মধ্যে জাতপাতের সংকীর্ণতা বর্ণভেদের বিরুদ্ধে কবির তীব্র ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।

১০. ফাল্গুনী : ‘ফাল্গুনী’ নাটকে বসন্তের আনন্দ উৎসবের মধ্যেও চিরনবীনকে উদ্ভাসিত করা হয়েছে। পুরাতন মৃত্যুর দিয়ে নতুন প্রকাশিত হয়। নবীন মরণে অবগাহন করে নতুন জীবন লাভ করে- সেটাই তো বসন্তের মর্মকথা। 

বাংলা নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব : 

বাংলা নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান অবিস্মরণীয়। 

(এক). বাংলা থিয়েটারে যখন পেশাদারি নাট্যশালার যুগ চলছে তখন রবীন্দ্রনাথের নাট্যরচনার প্রয়াস এবং বিভিন্ন স্থানে সেই সব নাটকের অভিনয়, নাট্যপরিচালনার ব্যবস্থা করে শুধু নাট্যসাহিত্যের নয়, নাট্যামোদী মানুষের কাছেও আদর্শস্থানীয় হয়ে রয়েছেন।

(দুই) নাট্যমঞ্চ, নাট্য প্রযোজনা, নাট্যাভিনয় সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী আধুনিক। নাট্যাভিনয়ের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার কথা লিখেছেন শান্তিদেব ঘোষ, “নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয় একা তিনি শিখিয়েছেন পাখী পড়ানোর মতো করে।”

(তিন) রবীন্দ্রনাথ গ্রীক নাট্যকলা ও শেক্সপীয়রীয় উভয় নাট্যকলাকে অনুসরণ করেছেন। তাঁর বেশিরভাগ ট্রাজেডিতেই পাপীকে লোভের বন্ধন থেকে মুক্ত করতে একটি মহৎ চরিত্রের মৃত্যু হয়েছে। রাজা ও রানী”তে কুমারসেন, ‘তপতী’তে সুমিত্রা, ‘বিসর্জনে’ জয়সিংহ, ‘মুক্তধারা’তে অভিজিৎ, ‘রক্তকরবী’তে রঞ্জনকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।

(চার) নাটকে গণচেতনার দিকটি জনতা চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। ‘বিসর্জন’, ‘রাজা রাণী’, ‘মালিনী’তে শেক্সপিয়রের জনতা চরিত্রের মতো এই চরিত্রগুলি নাট্যকারের অপরূপ সৃষ্টি- যা পরবর্তীকালের নাট্যকারদের প্রভাবিত করেছিল। 

(পাঁচ) রবীন্দ্রনাথের সাংকেতিক নাটকগুলি ভাব বা আদর্শের প্রতীক হয়েও নাটকীয় দ্বন্দ্বের জন্য বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। মানসদ্বন্দ্বে তত্ত্বময় ব্যাখ্যার মধ্যে নাটকীয়তা, সাংকেতিকতা একই সঙ্গে আভাসিত হয়েছে। ‘রক্তকরবী’ নাটকের নন্দিনী প্রতীকী চরিত্র হয়েও মানবীর ছবি’। মুক্তধারা’র অমল মুমুক্ষু মানবতার প্রতীক হয়েও সে চিরশিশু।

(ছয়) রবীন্দ্র নাটকে সংগীতের ব্যবহার অনবদ্য, রবীন্দ্রনাথের গানের সুর প্রতীকের বার্তা বহন করে এনেছে।

(সাত) ঠাকুরদা চরিত্র রবীন্দ্রনাথের এক অপরূপ সৃষ্টি। ‘শারদোৎসব’-এ ‘ঠাকুরদা চরিত্রের প্রথম সাক্ষাৎ আমরা পাই, ‘রাজা’ নাটকে তার বিকাশ। তারপর ‘ডাকঘর’-এ ফকির বেশে, অচলায়তন’-এ দাদা ঠাকুর রূপে মুক্তধারা’য় ধনঞ্জয় বৈরাগী রূপে ফাল্গুনী’তে বাউল রূপে উপস্থিত হয়েছেন। ঠাকুরদা হলেন মুক্ত আত্মা। ঔপনিষদিক আদর্শে বিশ্বাসী ঋষি কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাটকে ঠাকুরদা চরিত্রের মাধ্যমে প্রেমের মুক্তি তথা আত্মপ্রকাশের মুক্তির কথা শুনিয়েছেন।

(আট) রবীন্দ্র নাটকের সংলাপের বৈচিত্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার গদ্য সংলাপে যে বুদ্ধিদীপ্ত বাগ্‌বৈদগ্ধ্য তা শেষজীবনের নাটকগুলিকে বিশেষত্ব দান করেছে।

(নয়) রবীন্দ্রনাথ দেখালেন নাটক সূক্ষ্ম কলারূপ। বিশেষ করে কৌতুক নাটক গুলিতে এত মার্জিত সূক্ষ্ম  রহস্যবোধ যা অননুকরণীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে।

আরো পড়ুন

বাংলা ছোট গল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান আলোচনা করো

Leave a Comment

error: Content is protected !!