শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে | Relation Between Education and Intelligence in Bengali
উত্তর:
শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক
শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ গুণাবলীগুলির পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যে সকল দক্ষতার প্রয়োজন সেগুলাে অর্জনে সহায়তা করা হয়। এটি একটি জীবনব্যাপী, গতিশীল, সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যাক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন ঘটে এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
বুদ্ধি হল এক ধরনের মানসিক শক্তি যার সাহায্যে ব্যক্তি সুক্ষ, জটিল, বিমূর্ত বিষয়ে চিন্তা করতে পারে এবং ব্যাক্তি নতুন পরিবেশের সাথে অভিযােজন করতে পারে, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারে।
শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তির বুদ্ধি না থাকলে শিক্ষা সার্থক হতে পারে না। সেজন্য বুদ্ধি এবং শিক্ষা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।
1) বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে: সাধারণত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সময় তাদের বুদ্ধাংকের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি বুদ্ধির অভিক্ষা মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাপ করা উচিত। বুদ্ধির পরিমাপ করে ছাত্রদের ভর্তি করবে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে হয় না।
2) শিক্ষার্থীদের বিভাগীয়করণের ক্ষেত্রে: বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিতে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা পঠন-পাঠন করে। একই শ্রেণিতে পঠন-পাঠন করলেও তাদের সকলের মৃধা এবং বুদ্ধাঙ্ক একই প্রকার হয় না। তাছাড়া একসাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা অসুবিধাজনক বুদ্ধির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকরণ করলে শিক্ষকের পক্ষে পাঠ পরিচালনা করা সহজ হয়। তাই একই শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগ যেমন-A,B,C,D ইত্যাদিতে বিভক্ত করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই বিভাগীয়করনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিই অন্যতম শর্ত হওয়া উচিত। একই শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধাঙ্ক বৈষম্য বেশি হলে পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা যায়। সমবুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পাঠদান করলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের সুবিধা হয়।
3) পাঠক্রম নির্দেশনার ক্ষেত্রে: শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম রয়েছে। যেমন – কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ইত্যাদি। বুদ্ধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম গ্রহণ করা উচিত। কোন শিক্ষার্থী কি ধরনের পাঠক্রম গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে সাফল্য পাবে তা তার বুদ্ধির পরিমাপের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা উচিত। শিক্ষার্থীর বুদ্ধির সঙ্গে পাঠক্রমের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
4) বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে: প্রতিটি শ্রেণীতে যেমন একটা প্রতিভাবান শিক্ষার্থী থাকে তেমনি আবার কিছু শিক্ষার্থী থাকে যারা অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন। বুদ্ধির অভীক্ষার মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করলে প্রতিভাবানরা দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যদিকে যারা অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন তাদের জীবনে শিক্ষাগত সফলতা আসবে। বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে বুদ্ধি পরিমাপের বিশেষভাবে প্রয়োজন।
5) আশানুরূপ ফল লাভে অসমর্থ: আমাদের দেশে বহু শিক্ষার্থী উপযুক্ত মেধার থাকা সত্বেও বিভিন্ন মানসিক কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে, বুদ্ধির অভিষ্কা দ্বারা বাছাই করে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারলে তারা বিশেষভাবে উপকৃত হয় এবং শিক্ষায় সফলতা আসে।
6) মূল্যায়নের ক্ষেত্রে: যেকোনাে শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেকোনাে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভিক্ষা প্রয়োগ করা হয়। অনেক সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উন্নত ধরনের পঠন-পাঠনের সাহায্যে মেধাবীদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে সহায়তা করেন।
7) বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে: বৃত্তি দানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার পাশাপাশি তাদের বুদ্ধির সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দানের ব্যবস্থা করে থাকে। বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী নির্বাচনে অন্যান্য শর্তাবলীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধাঙ্ককে একটি শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
8) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী: শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে কোন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গ্রহণ করবেন তার প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রচলন দেখা যায়।
9) মানসিক অসুস্থতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে: মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে বুদ্ধির একটি সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক ব্যাধি চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ রােগীর অন্যান্য আচরণের পাশাপাশি বুদ্ধির পরিমাপ করে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে বুদ্ধির স্বল্পতা মানসিক রােগের একটি অন্যতম কারণ।
10) বৃত্তিগত নির্দেশনার ক্ষেত্রে: বৃত্তিগত নির্দেশনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে বুদ্ধি সম্পর্কে তথ্য অন্যতম। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ, দক্ষতা, প্রবণতা, বিশেষ ক্ষমতা প্রভৃতির পাশাপাশি বুদ্ধারে যথেষ্ট ব্যবহার দেখা গেছে।