সাম্যের জন্য শিক্ষা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ | জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)
উত্তর:
সাম্যের জন্য শিক্ষা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ
শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্য দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে সেগুলিকে দূর করার জন্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণি যেমন – তপশিলি জাতি ও উপজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী শিক্ষা, প্রতিবন্ধীদের এবং বয়স্কদের শিক্ষা প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হযেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যাতে তারাও সমান সুযােগ পায় তার ওপর জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তপশিলি জাতির শিক্ষা :
a) 14 বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের যাতে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠানাে হয় তার জন্য পরিবারগুলিকে উৎসাহদান করতে হবে।
b) তপশিলি ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত যাতে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা যায় তার জন্য বিভিন্ন ছােট ছােট পরিকল্পনা (Micro Planning) গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
c) ঝাড়ুদার, ধােপা, নাপিত প্রভৃতি নিম্ন শ্রেণীর পরিবারের শিশুদের প্রথম শ্রেণী থেকে উচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত সকলের জন্য বৃত্তি দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
d) তপশিলি ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠনের সুবিধার জন্য তাদেরই সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে।
e) শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা।
f) তাদের সুবিধামতাে স্থানে বিদ্যালয় স্থাপন এবং বয়স্কদের শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।
g) তপশিলি জাতির ছেলেমেয়েদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।
h) শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য নতুন পদ্ধতি ও কৌশল আবিষ্কার করতে হবে।
তপশিলি উপজাতির শিক্ষা :
a) আদিবাসী এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
b) তপশিলি উপজাতিদের ভাষার উন্নতি ঘটিয়ে সেই ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
c) শ্রেণীতে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠদানে যাতে অসুবিধা না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
d) উপজাতিদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার জন্য পাঠক্রম ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
e) শিক্ষিত আদিবাসী যুবক যুবতীদের শিক্ষকতা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
f) পেশাগত ও বৃত্তিমুখী শিক্ষায় উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।
g) আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
h) তাদের বিশেষ জীবিকানির্বাহ দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
i) প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা কেন্দ্র ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
j) তপশিলি উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রথা বহির্ভুত ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
নারী শিক্ষা :
দেশের শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য নারীদের শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
a) নারীদের শিক্ষার বিকাশের জন্য পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নতুনভাবে সাজাতে হবে।
b) মহিলাদের মধ্য থেকে নিরক্ষরতা পুরােপুরি দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
c) বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।
d) সাধারণ শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের পাঠক্রমে কোন পার্থক্য থাকবে না।
e) পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের ও সমান সুযােগ দিতে হবে।
f) স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা :
a) সমাজে যে সকল পিছিয়ে পড়া শ্রেণি রয়েছে বিশেষত যারা পার্বত্য এলাকায় দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করে সেই সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
b) তারা যাতে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নতি সাধনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
c) তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
d) স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা :
a) যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবন্ধকতা অল্প পরিমাণে রয়েছে তাদেরকে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযােগ করে দিতে হবে অর্থাৎ এদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার (Inclusive Education) ব্যবস্থা করতে হবে। আর যাদের প্রতিবন্ধকতার মাত্রা খুব বেশি তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার (Special Education) ব্যবস্থা করতে হবে।
b) প্রতিবন্ধীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বয়স্ক শিক্ষা :
বয়স্ক শিক্ষায় প্রবাহমান শিক্ষার কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য নিম্নলিখিত কতগুলি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে –
a) গ্রামাঞ্চলে চলমান শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
b) সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শ্রমিকদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
c) অধিক সংখ্যক পুস্তকপ্রকাশ, পাঠাগার, রেডিও, টিভি, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি গণমাধ্যমে ব্যবহার করতে হবে।
d) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠন তৈরি করা প্রয়োজন।
e) কর্মভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করা।
f) দূর শিক্ষা কর্মসূচির প্রসার ঘটানাে।
g) মাধ্যমিকত্তোর স্তরের শিক্ষালয় স্থাপন করতে হবে।