সাংখ্য দর্শন (Sankhya Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)
উত্তর:
সাংখ্য দর্শন
ভারতীয় দর্শনের সবথেকে প্রাচীনতম দর্শন হল সাংখ্য দর্শন। প্রাচীন ভারতের শ্রুতি, স্মৃতি, পুরান, বেদ, উপনিষদে সাংখ্য দর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায়। কপিলমুনিকে সংখ্যা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
সাংখ্য শব্দের অর্থ হল ‘সম্যক জ্ঞান’। যে দর্শনে সম্যক জ্ঞানের কথা আলােচিত হয়েছে বা যে দর্শন আমাদের সম্যক জ্ঞান দিতে পারে সেই কপিলমুনি দর্শনকেই সাংখ্য দর্শন বলে। সাংখ্য দর্শন বিশ্বাস করে প্রতিটি কাজের পেছনে কোন না কোন কারণ থাকে। কারণ ব্যতীত কোন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কার্য এবং কারণ একে অপরের পরিপূরক। শূন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হয়না। এই দর্শনে পঁচিশটি ‘তত্ব স্বীকার করা হয়। পঁচিশটি তত্ব হল –
• অহংকার
• মন
• পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু,কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা ও স্বক)
• পঞ্চতন্মাত্র (রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ)
• পঞ্চ কর্মেন্দ্রি (হস্ত, পদ, পায়ু, উপস্থ ও বাক)
• পঞ্চমহাভূত (ক্ষিতি বা পৃথিবী, অ বা জল, তেজস বা আগুন, মরুৎ বা বাযু ও ব্যোম বা আকাশ )।
সাংখ্য দর্শন মনে করে এই বিশ্ব সৃষ্টির মূলে রয়েছে দুটি বিশেষ তত্ব একটি হল পুরুষ ও প্রকৃতি। তাই একে দ্বৈতবাদী দর্শন বলে।
প্রকৃতি:
প্রকৃতিকে জড় জগতের প্রথম ও প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রকৃতি জড় ও সতত পরিবর্তনশীল। সাংখ্য মতে প্রকৃতি সত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনটি গুণের সমাহারে সৃষ্টি। এই তিনটি গুণকে পৃথিবী সৃষ্টির প্রধান উপাদান বলা হয়। এই গুণগুলি সূক্ষ হওয়ার এগুলিকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। জগতের বিভিন্ন বস্তু এই গুণগুলির কার্য, আর এই কার্য থেকেই এদের অস্তিত্ব অনুমান করে নেওয়া হয়।
সত্ব সুখদায়ক, রজঃ দুঃখদায়ক ও তমঃ বিষাদাত্মক কার্যকারণ নির্ধারণ করে। জাগতিক সমস্ত বস্তুর মধ্যে বাংলা সুখ, দুঃখ ও বিষাদ পরিলক্ষিত হয় । সত্ব গুণের কারণে আনন্দ, প্রীতি, সন্তোষ, উল্লাস হয়। সমস্ত রকম দুঃথের অভিজ্ঞতা উচ্ছাস, যন্ত্রণা, সমাপ্তি, কঠোরতা, ভার ও ধ্বংস রজঃ গুণের কারনে হয় । ভ্রম ,নিদ্রা, আলস্য, প্রমােদ, এইসব সৃষ্টি হয় তমঃ গুণের কারণে। এই তিন গুণ একত্রে ক্রিয়াশীল হয়। এদের পৃথক করা সম্ভব নয় । জাগতিক সকল বস্তুর মধ্যে এই তিন গুণ উপস্থিত থাকে ।
পুরুষ:
সাংখ্য দর্শনে আত্মাকেই পুরুষ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পুরুষ স্বাধীন, আনন্দময়, মুক্ত, সচেতন, অপরিবর্তনীয় ও নিষ্ক্রিয় । পুরুষ বা আত্মা মন ও ইন্দ্রিযের দ্বারা অনুভূত হয় না এবং একে শব্দ ও ব্যাখ্যা। দ্বারা বােঝানাে যায় না। পুরুষ নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ ও সব রকম জাগতিক মােহ থেকে মুক্ত । পুরুষের সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। পুরুষ বা আত্মা ব্যতীত এ জগতকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । পুরুষকে অস্বীকার করার অর্থ হল নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। প্রকৃতির সক্রিয় সৃষ্টি তখনই হয় যখন প্রকৃতি ও পুরুষের মিলন ঘটে ।
সাংখ্য দর্শনের জ্ঞানতত্ব :
মানুষের জ্ঞানলাভের কাজ যে পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় তাকে প্রমাণ বলে। অর্থাৎ, প্রমাণ হল জানার উৎস। সাংখ্য মতে মানুষের জানার কাজ সম্পূর্ণ হয় প্রধানত তিনটি উৎসের মাধ্যমে। এই উৎস গুলি হল প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ।
1) প্রত্যক্ষ: প্রত্যক্ষ মানে উপলব্ধি। জ্ঞানেন্দ্রিয় সঙ্গে সরাসরি সংযােগের ফলে প্রত্যক্ষ সম্ভব হয়। প্রত্যক্ষ দু’প্রকার –
নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ: নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল প্রত্যক্ষের প্রাথমিক স্তর। কোন বস্তু প্রথম ইন্দ্রিয়ের গােচরীভূত হলে বস্তুটির কোন বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করা যায়না। বস্তুর এই প্রাথমিক প্রত্যক্ষকে নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ বলা হয়। নির্বিকল্প প্রত্যক্ষে কেবলমাত্র কোন বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুটি সম্পর্কে জ্ঞান শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা যায় না।
সবিকল্প প্রত্যক্ষ: ঠিক পরমুহূর্তে বিচার ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বস্তুটির বৈশিষ্ট্য যখন অনুধাবন করা সম্ভব হয় তখন তাকে সবিকল্প প্রত্যক্ষ বলা হয়।
2) অনুমান: যুক্তি প্রয়োগ করে এক বা একাধিক পর্যবেক্ষণ এবং পূর্ববর্তী সত্য থেকে একটি নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছানাে। সাংখ্য মতে, কার্যকারণের অবিচ্ছেদ্য সূত্র ধরে আমরা প্রত্যক্ষ থেকে অপ্রত্যক্ষে পৌঁছাই। ধোঁয়া পর্যবেক্ষণ করে, আগুন অনুমান করা।
3) শব্দ: শব্দ একটি বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। কতগুলি শব্দ বিশেষ পদ্ধতিতে সজ্জিত হলে একটি বাক্য গঠিত হয়। কোন বাক্যকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে যে শব্দগুলাে দিয়ে বাক্যটি গঠিত হয়েছে সেগুলির অর্থ যথাযথভাবে বুঝতে হবে। সাংখ্য দর্শনে প্রকৃত জ্ঞানের উৎস হল বেদ। সাংখ্য দার্শনিকরা বেদ ভিত্তিক শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দের প্রামাণ্য স্বীকার করেনা।
আরো পড়ুন
বেদান্ত দর্শন (Vedanta Philosophy) | বেদান্তের প্রধান তত্ত্ব | শিক্ষার পদ্ধতি | পাঠক্রম
ভাববাদ (Idealism) কি | ভাববাদ সম্পর্কে দার্শনিকদের মতামত | ভাববাদ ও শিক্ষার লক্ষ্য, পাঠক্রম, পদ্ধতি
প্রয়ােগবাদ (Pragmatism) কি | প্রয়ােগবাদী দর্শনের মূলনীতি | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদের প্রভাব
দর্শন কি | দর্শনের সংজ্ঞা দাও | দর্শনের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলোচনা করো
যোগ দর্শন (Yoga Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)
ন্যায় দর্শন কি | শিক্ষায় ন্যায় দর্শনের প্রভাব কি | What is Nyaya Philosophy in Bengali