মনোযোগের নির্ধারক কি কি | Determinants of Attention in Bengali
উত্তর:
মনােযােগের নির্ধারক
মনােযােগ হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা কোন একটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি আমাদের মনকে নিবিষ্ট করে ওই বিষয় সম্বন্ধে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করতে পারি।
আমরা মনােযােগ কেন দিয়ে থাকি ?
কোন একটি বিশেষ মুহূর্তে একটি বিশেষ বস্তুর প্রতি আমরা মনােযােগ দিয়ে থাকি তার নির্ধারকের ওপর ভিত্তি করে। মনােযােগ নির্ধারিত হয় বস্তুর নিজস্ব কতগুলি গুণাবলী এবং যিনি মনােযােগ দিচ্ছেন, তার নিজস্ব কতগুলি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে। মনােযােগের এই নির্ধারক গুলিকে মনােযােগের শর্তও বলা হয়। নির্ধারক গুলিকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনু্যায়ী দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বস্তুগত নির্ধারক ও ব্যক্তিগত নির্ধারক।
বস্তুগত নির্ধারক:
বস্তু বা উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্য যখন ব্যক্তির মনােযােগ আকর্ষণ করে তখন তাকে বস্তুগত নির্ধারক বলা হয়। মনােযােগের বস্তুগত নির্ধারক গুলি হল –
1) তীব্রতা: উদ্দীপকের তীব্রতা আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষণ করে। যেমন – উজ্জ্বল আলাে, তীব্র শব্দ, গাড়াে রং ইত্যাদি। একই আকাশে চাঁদ ও তারা থাকলেও আমাদের দৃষ্টি তারাদের দিকে আগে যায়না, চাঁদের উজ্জ্বল আলাে আমাদের মনােযােগ আকর্ষণ করে।
2) আকৃতি: খুব ছােট বা ক্ষুদ্র কোন জিনিসের তুলনা বড় কোন জিনিসের প্রতি আমাদের মনােযােগ সহজেই আকৃষ্ট হয়। উদ্দীপক বড় হলে আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি উত্তেজিত হয় ফলে সেই উদ্দীপকের প্রতি আমাদের মনােযােগ আগে আকৃষ্ট হয়। যেমন – খবরের কাগজের বড় হেডলাইন গুলি আগে আমাদের নজরে পড়ে।
3) পরিবর্তন: পরিবর্তন আমাদের মনােযােগ সবসময় আকর্ষণ করে। হঠাৎ কোন জিনিসের যদি পরিবর্তন ঘটে তাহলে আমাদের মনােযােগ সেই বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘড়ি টিক টিক আওয়াজ করে চলছে হঠাৎ ঘড়িটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের মনােযােগ তৎক্ষণাৎ ওই দিকে চলে যায়।
4) অভিনবত্ব: কোন নতুন বা অভিনব বস্তু আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষণ করে। যেমন- নতুন জামা, নতুন বই, নতুন লােক, নতুন বাড়ি, নতুন খবর আমাদের মনােযােগ সহজে আকর্ষণ করে। কোন ব্যক্তি নতুন ধরনের কোনাে পােশাক পরলে সেই ব্যক্তির প্রতি আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষিত হয়।
5) গতিশীলতা: স্থির বস্তুর চেয়ে গতিশীল বস্তুর আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষণ করে বলা হয়। যেমন – গাছের একটি পাখি বসে ছিল আমরা দেখতে পাইনি, যেই পাখিটি উড়ে গেল তখন আমাদের মনােযােগ পাখিটির প্রতি আকৃষ্ট হল। বা বিজ্ঞাপন দাতাদের চলমান বিজ্ঞাপন সহজেই আমাদের মনােযােগ আকর্ষণ করে।
6) পুনরাবৃত্তি: একই উদ্দীপকে যদি বারবার আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে আমাদের মনােযােগ সহজেই সে দিকে আকৃষ্ট হয়।
যখন কোন ব্যাক্তি একবার বলে সাহায্য করাে, কথাটি এক বার বললে আমরা মনােযােগ নাও দিতে পারি। কিন্তু সাহায্য করাে কথাটা যদি বারবার বলতে থাকে তখন আমাদের মনােযােগ সহজেই সেদিকে চলে যায়। কারণ, প্রথম এক-দুবার আমাদের মনােযােগ এড়িয়ে গেলেও পুনরাবৃত্তির জন্য একবার না একবার আমাদের মনােযােগ আকর্ষিত হয়।
7) স্পষ্টতা: উদ্দীপকের স্পষ্টতা আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষণ করে। যে জিনিস যত বেশি স্পষ্ট সেই জিনিসের প্রতি আমাদের মনােযােগ সহজেই আকৃষ্ট হয়। অস্পষ্ট ছবি তুলনায় স্পষ্ট বা পরিষ্কার ছবির প্রতি আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষিত হয়।
8) বৈসাদৃশ্য: দুটি জিনিসের বৈসাদৃশ্য আমাদের মনােযােগ সহজেই আকর্ষণ করে। একজন খুব লম্বা মােটা লােকের পাশে যদি একজন খুব বেটে – রােগা লােক থাকে তাহলে আমাদের মনােযােগ সেইদিকে সহজেই আকর্ষিত হয়।
ব্যক্তিগত নির্ধারক :
ব্যক্তির নিজস্ব আগ্রহ ও চাহিদা উপর ভিত্তি করে যখন কোন উদ্দীপকের উপর প্রতি মনােযােগী হয় তখন তাকে ব্যক্তিগত নির্ধারক বলা হয়।
1) আগ্রহ: আগ্রহ হল মনােযােগের প্রধান কারণ। যে যেই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী তাঁর সেই বিষয়ে মনােযােগ আপনা আপনি চলে যায়। আর যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ নেই সেই বিষয়ে আমরা মনােযােগ দেই না। খবরের কাগজে কে কোন পৃষ্ঠায় মনােযােগ দেয় তা থেকে বােঝা যায় তার আগ্রহ।
2) জৈবিক চাহিদা: আমাদের জৈবিক চাহিদা ক্ষুধা, তৃষ্ণা, জ্ঞানের চাহিদা প্রভৃতি বিষয় গুলি আমাদের মনােযােগ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। খিদার চাহিদা মেটানাের জন্য আমরা খাদ্য বস্তুর প্রতি মনােযােগ দেই। আবার কোন বিশেষ বিষয়ে জ্ঞানের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সেই বিষয়ের প্রতি মনােযােগী হই।
3) অভ্যাস: মনােযােগ অভ্যাস দ্বারাও নির্ধারিত হয়। প্রত্যেকটা মানুষের একটা নিজস্ব অভ্যাস থাকে। তিনি তাঁর অভ্যাসের কারণে সেই বিশেষ বস্তুর প্রতি মনােযােগী হন। যাদের ঘুম থেকে উঠেই চা খাওয়ার নেশা বা খবরের কাগজ পড়ার নেশা তারা সেই দিকেই মনােযােগী হয়।
4) সেন্টিমেন্ট: সেন্টিমেন্ট হল এক ধরনের মানসিক সত্তা যা কোন ব্যক্তি, ঘটনা, বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। যে বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে আমরা তার প্রতি মনােযােগী হই। মাতৃভূমির প্রতি ভালােবাসা। যারা প্রবাসী বাঙালি তাদের নজর থাকে সব সময় তার নিজের দেশের খবরের উপর।
5) প্রক্ষোভ: প্রক্ষোভের দ্বারাও আমাদের মনােযােগ নির্ধারিত হয়। আমাদের যা ভাললাগে সেই বিষয়ের প্রতি আমরা মনােযােগ দিই আর যা ভালাে লাগেনা তার প্রতি মনােযােগ দিই না। আমরা যাকে পছন্দ করি তার সমস্ত গুনই আমাদের চোখে পড়ে আর যাকে পছন্দ করি না তার কোন গুনই চোখে পড়ে না।
6) অভিজ্ঞতা: অনেক সময় অভিজ্ঞতার জন্য মনােযােগ নির্ধারিত হয়। কোন দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলােচনার সময় যে ব্যাক্তি আগে সেই জায়গা বেরিয়ে এসেছেন ওই জায়গার নাম শােনামাত্র তিনি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করতে থাকেন সেখানকার যে বিশেষ বিশেষ স্থান তার মনােযােগ আকর্ষণ করেছিল সেগুলাে সম্বন্ধে বলতে থাকেন।
7) মানসিক প্রবণতা: ব্যক্তির মানসিক প্রবণতাত্ত মনােযােগের অন্যতম কারণ। যে শিল্পী তার মনােযােগ শিল্পকলার দিকে, যে গায়ক তার মনােযােগ সংগীতের দিকে। মনােযােগের এই নির্ধারক গুলি ছাড়াও আমাদের মনােযােগ দেহ, মন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। মনােযােগের ক্ষেত্রে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেহের সঙ্গে মনের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুস্থ দেহ এবং সুস্থ মন হলেই কোন বিষয়ের প্রতি আমরা মনােযােগ দিতে পারি পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ও আমাদের মনােযােগ নির্ভর করে পড়ার সময় হঠাৎ চারপাশে গন্ডগােল হলে পড়ায় মনােযােগ দেওয়া যায় না।
আরো পড়ুন
মনোযোগ কাকে বলে | মনোযোগের প্রকৃতি গুলি কি কি | Attention in Bengali