শিখন অক্ষমতার ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Learning Disability in Bengali

শিখন অক্ষমতার ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ | Concept and Classification of Learning Disability in Bengali

উত্তর:

শিখন অক্ষমতা (Learning Disability)

যে সমস্ত শিশুদের পঠনে অক্ষমতা, লিখনে অক্ষমতা বা গণিতে অক্ষমতা রযেছে। অর্থাৎ, 3R এর মধ্যে (Reading, Writing & Arithmetic) যেকোনাে একটিতে বা একাধিক ক্ষেত্রে অক্ষমতা রয়েছে তাদের শিখন অক্ষম বা (Learning Disable) বলা হয়। শিশু যখন লেখাপড়া শুরু করে তখনই তার মধ্যে এই অক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শিখন অক্ষমতা কেবলমাত্র প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যেই দেখা যায় তা নয় স্বাভাবিক শিশু যাদের অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা নেই কিন্তু শিখন অক্ষমতা রয়েছে এইরকম প্রতিবন্ধী শিশুর অস্তিত্ব শিক্ষাক্ষেত্রে বরাবরই ছিল। শিখন অক্ষমতার কারণে এই সমস্ত শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে এবং একসময় বিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। আগে এই ধরনের শিখন প্রতিবন্ধকতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, মনস্তত্ববিদ এই শিখন প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে গুরুত্ব আরােপ করেছেন।

শিখন অক্ষমতার সংজ্ঞা :

শিখন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে প্রচলিত ও গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা দেন আমেরিকার Office of Education (1997)। শিখন প্রতিবন্ধকতা হল এমন এক ধরনের অক্ষমতা যা শিক্ষার্থীর মৌখিক ও লিখিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং অর্থ অনুধাবন সংক্রান্ত এক বা একাধিক মনােবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এই অক্ষমতা কোন বিষয়ের মনােযােগ দিয়ে শােনা, চিন্তা করা, কথা বলা, পাঠ করা, লেখা, বানান করা এবং গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। এই অক্ষমতা শিক্ষার্থীর ধারণা গঠনগত সমস্যা, মস্তিষ্কে আঘাত এবং বিকাশ গত সমস্যা ইত্যাদি অবস্থার

সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু যে সমস্ত শিশুর দর্শনগত সমস্যা, শ্রবণ জনিত সমস্যা, শারীরিক ত্রুটিজনিত সমস্যা, বিভিন্ন মানসিক ও প্রাক্ষোভিক সমস্যা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে শিখনের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তাদের শিখন প্রতিবন্ধী বলা যাবে না।

National Joint Committee (1991) এর মতে, শিখন অক্ষমতা কথাটি দ্বারা একটি তাৎপর্যপূর্ণ বহুমাত্রিক অক্ষমতাকে বােঝানাে, যা মনােযােগ দিয়ে শােনা, কথা বলা, পাঠ করা, লেখা, যুক্তি প্রয়ােগ এবং গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে বহিঃপ্রকাশিত হয়। এই অক্ষমতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌলিক হয়ে থাকে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সঠিক ক্রিয়াশীলতার ক্ষেত্রে সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। এমনকি অন্যান্য শারীরিক, মানসিক অক্ষমতা ও আর্থসামাজিক সমস্যার সঙ্গে একযােগে এই শিখন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। তবে এই শিখন অক্ষমতা কখনােই শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক সমস্যা ইত্যাদি মূল প্রতিবন্ধকতার প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়ার ফল নয়।

শিখন অক্ষমতার শ্রেণীবিভাগ (Classification of Learning Disability) :

আমেরিকার National Institute of Health শিশুর প্রতিবন্ধকতাকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে।

1) বাচনিক ও ভাষাগত বিকাশে অক্ষমতা (Developmental Speech & Language Disorder) : 

এই সমস্ত শিশুদের উচ্চারণের ক্ষেত্রে, পারস্পরিক যােগাযােগের জন্য ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং অন্যের কথা বুঝতে বিভিন্নভাবে অসুবিধা হয়। এই সমস্যাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

i) উচ্চারণে অক্ষমতা (Phonetic Disability) : এই সমস্যা সংক্রান্ত শিশুরা উচ্চারণ এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে সমবয়সি শিশুদের থেকে পিছিয়ে থাকে। Speech Therapy-র সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। 

ii) ভাষা ব্যবহারে অক্ষমতা (Language using Disability) : ভাষাগত সমস্যার কারণে কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে নিজের মনের ভাব প্রকাশে অক্ষমতা দেখা যায়। সম বয়সী শিশুদের অপেক্ষায় এদের শব্দভাণ্ডার অনেক কম থাকে।

iii) ভাষা অনুধাবনে অক্ষমতা (Language Understanding disability) : ভাষা ব্যবহারের মত, ভাষা বােঝা বা শব্দের অর্থ বােঝার ক্ষমতা এদের কম।

2) শিক্ষাগত দক্ষতার অক্ষমতা (Educational Skill related Disability) : 

শিক্ষাগত দক্ষতার দিক থেকে এদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – 

i) পঠনগত অক্ষমতা (Dyslexia) : পঠনগত অক্ষমতা হলাে এক বিশেষ ধরনের শিখন অক্ষমতা। Dyslexia আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যােগাযােগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয়, যেমন- পড়া, বানান করা, উচ্চারণে অস্পষ্টতা খুব বেশি দেখা যায়। 

ii) লিখন অক্ষমতা (Dysgraphia) : লিখনের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিভিন্ন ক্রিয়া যুক্ত থাকে। যেমন- শব্দভান্ডার, ব্যাকরন, স্মৃতি, অঙ্গুলি সঞ্চালন প্রভৃতি ভাষামুলক, জ্ঞানমূলক ও দেহসঞ্চালন মূলক আচরণ লিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে একটি বা একাধিক ধরনের ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা লিখন অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে।

iii) গাণিতিক অক্ষমতা (Dyscalculia) : গণিত হল সংখ্যা ও চিহ্নের পুনরুদ্রেক, বিষয়বস্তু স্মরণ করা, সংখ্যা বিন্যাস, আঙ্কিক বিমূর্ত বিষয়, যেমন – গাণিতিক প্রক্রিয়া যােগ, বিয়ােগ, গুন, ভাগ, ভগ্নাংশ, ছােট-বড় সংখ্যা ইত্যাদির সঠিক ক্রিয়ার সমষ্টি। এই ক্রিয়া গুলির যেকোনাে একটি বা একাধিক প্রক্রিয়ার ত্রুটি বা সমস্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাণিতিক অক্ষমতা সৃষ্টি করে। যাকে সাধারণত Dyscalculia বলে। 

3) অন্যান্য শিখন অক্ষমতা (Other Learning Disability) :

অনেক সময় শিখন অক্ষমতা মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটির ফলে ঘটে না। এদের শিখনে পিছিয়ে পড়ার জন্য বিভিন্ন সঞ্চালনগত সমস্যা এবং কিছু বিকাশগত সমস্যা এর জন্য দায়ী। এই সমস্যার ফলে ভাষা শিখনে ধীরতা, শিখন ক্ষমতার বিকাশে অক্ষমতা ইত্যাদি দেখা যায়। এই সমস্যাগুলিকে সামগ্রিক শিখন প্রতিবন্ধকতার বিশেষ কোন পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। এই শ্রেণির শিখন অক্ষমতাকে পৃথক ভাবে দেখা হয়।

আরো পড়ুন

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু কাদের বলে | শ্রেণীবিভাগ ও শনাক্তকরণ | Concept of Hearing Impairment Children in Bengali

প্রয়ােগবাদ (Pragmatism) কি | প্রয়ােগবাদী দর্শনের মূলনীতি | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগবাদের প্রভাব

দর্শন কি | দর্শনের সংজ্ঞা দাও | দর্শনের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলোচনা করো

যোগ দর্শন (Yoga Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)

সাংখ্য দর্শন (Sankhya Philosophy) | Indian Philosophy (ভারতীয় দর্শন)

ন্যায় দর্শন কি | শিক্ষায় ন্যায় দর্শনের প্রভাব কি | What is Nyaya Philosophy in Bengali

Leave a Comment

error: Content is protected !!