সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে | শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা

সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে | শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা

উত্তর:

সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে ?

সামাজিক পরিবেশ বলতে সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের বহুমুখী জীবনের সমষ্টিগত রূপ ও অবস্থাকে বোঝায়। জীবন বিকাশের তাগিদে মানুষ যে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিষয়ে পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক ও সংগঠন রচনা করে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।

পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, নাট্যসভা, সাহিত্যসভা, বিতর্কসভা, লেখক সমিতি এছাড়া মানুষের তৈরি বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান, মূল্যবোধ, ইত্যাদি সভ্য জীবন যাপনের জন্য সামাজিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা

শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেগুলি হল –

1) দৈহিক বিকাশ: সামাজিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পরিবার। শিশুর জন্মের পর থেকে তার পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা শিশুর জীবন বিকাশে সহায়তা করে।তাকে নিরাপদ আশ্রয়দান করে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করে এবং সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। পরবর্তীকালে‌ বিদ্যালয়, ক্লাব প্রভৃতি শিশুর দৈহিক বিকাশকে সহায়তা করে।

2) মানসিক বিকাশ: শিশুর ভাষার বিকাশ, চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা, যুক্তিশীলতা ও বিভিন্ন সমাজবাঞ্ছিত আচরণ প্রভৃতি গড়ে তোলা জন্য পরিবার, বিদ্যালয়, গণমাধ্যম এবং সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

3) ভাষার বিকাশ: শিশু যে সমাজে জন্মায় সেই সমাজের প্রচলিত ভাষায় সে কথা বলতে শেখে। ভাষার মাধ্যমে শিশু তার মনের ভাব প্রকাশ করে‌। সমাজের দ্বারাই শিশুর ভাষার বিকাশ হয়।

4) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ: বেড়ে ওঠার সাথে সাথে শিশুর মধ্যে ভালো-মন্দ, উচিত – অনুচিত বোধ গড়ে ওঠে, যা নৈতিক বিকাশের সহায়ক। পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ও সামাজিক অনুষ্ঠান শিশুর নৈতিক বিকাশে সহায়তা করে। সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকে এই প্রতিষ্ঠানগুলি ও পরিবার শিশুর মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করে।

5) সামাজিক বিকাশ: মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা, তাই সামাজিক কিছু অনুশাসন শিশুকে মেনে চলতে হয়। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ সমবেদনা, সহযোগিতা, নেতৃত্ব, সমমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক গুণগুলি আয়ত্ত করে এবং এর মাধ্যমেই সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

6) প্রাক্ষোভিক বিকাশ: জন্মের পর থেকেই শিশু প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়া করতে শেখে। যেহেতু প্রক্ষোভ থেকে মানবশিশুকে পৃথক করা যায় না তাই প্রক্ষোভের সংযত প্রকাশ সামাজিক দিক থেকে কাম্য। এই জন্য পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে।

7) আগ্রহের বিকাশ: সামাজিক পরিবেশ শিশুর আগ্রহের বিকাশে সহায়তা করে। সামাজিক পরিবেশে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের কার্যাবলী, আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি দেখতে দেখতে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহের‌ সৃষ্টি হয়।

৪) সু-অভ্যাস গঠন: সামাজিক পরিবেশের প্রভাবে শিশু তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যগুলি অর্জন করে। ভালো সামাজিক পরিবেশ শিশুর মধ্যে সু অভ্যাস গঠনে সাহায্য করে।

9) সর্বাঙ্গীণ বিকাশ: পরিবার, বিদ্যালয়,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা শিক্ষার্থীর আচরণ কে প্রভাবিত করে। শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক এবং চারিত্রিক বিকাশে সহায়তা করে। এক কথায় শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করে।

আরো পড়ুন

সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদান | Factors of Social Change in Bengali

সমাজবিজ্ঞান | Sociology শব্দের অর্থ | সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা | সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে | শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি

Leave a Comment

error: Content is protected !!